বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নেতাজী সুভাষ চন্দ্র - হেমেন্দ্রবিজয় সেন.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র
১৪৯

জোস্ রিজলের মর্ম্মর-মূর্ত্তিতে মাল্যদান করিতে। এই মূর্ত্তিটি খুবই প্রসিদ্ধ, কেননা জোস্ রিজল ছিলেন ফিলিপাইনের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক এবং মুক্তিসংগ্রামের শহীদ।

 মূর্ত্তির পাদদেশে শত-শত ভারতীয়ের এক বিরাট জনতা সুভাষচন্দ্র ঘিরিয়া ধরিল। ইহারা সবাই থাকে ম্যানিলা কিংবা তাহার চতুষ্পার্শ্ববর্ত্তী অঞ্চলে। জনতা ‘জয়-হিন্দ’ ধ্বনিতে বসুকে জানাইল তাহাদের অভিনন্দন। ফটোগ্রাফাররা ফটো তুলিবে—বসুও দাঁড়াইলেন জনতার সঙ্গে।

 ফটো লওয়া শেষ হইল, বহুক্ষণ কাটিয়া গেল; তিনি নড়েন না, জনতাও নিস্তব্ধ—গভীর নীরবতার মধ্যে মৌন, অচঞ্চল দৃষ্টিতে রিজলের মূর্ত্তির দিকে সুভাষচন্দ্র তাকাইয়া রহিলেন।

 স্বাধীন ভারতের প্রতীক অঙ্কিত আজাদ-হিন্দ পতাকা প্রভাত-সমীরণে ইতস্ততঃ আন্দোলিত, বিরাট্ মূর্ত্তির পাদদেশে সুভাষচন্দ্রের অর্পিত ফুলের রাশি—এক কথায় সমগ্র অনুষ্ঠানটি উৎসবে রূপ ধারণ করিয়াছিল। সাগ্রহে প্রতীক্ষমাণ নীরব জনতার সম্মুখে তিনি সতৃষ্ণ নয়নে মূর্ত্তির দিকে তাকাইয়া রহিলেন।

 এইরূপ ঘটনায় কেহ-কেহ হয়ত সুভাষচন্দ্রকে ভাবপ্রবণ বলিয়া মনে করিবেন; কিন্তু তাঁহার সহিত কখনও যদি কাহারও আলাপ হইয়া থাকে, তাহা হইলে এইরূপ ধারণা হইবে বলিয়া আমার মনে হয় না। পক্ষান্তরে, আমার বহু সহকর্ম্মী আমাকে বলিয়াছেন যে, তাঁহারা তাঁহার শান্ত সমাহিতভাব এবং গভীর চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হইয়াছেন। সাংবাদিক-সম্মেলনে তাঁহার আচরণ ধীর-স্থির অথচ অতীব দৃঢ়। তিনি কদাচিৎ হাসিতেন, কিন্তু হাসিলে মৃদু ও মধুর হাসি হাসিতেন। আমার মনে হয় যে, হৃদয়াবেগ ও ন্যায়যুক্তির মধ্যে তিনি অবিচলিত সাম্য রক্ষা করিতেন।”