পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖՖ8 S99శు ক’রে বসে আছেন। লজ্জ্বাধিক্যবশত: মুখ ছাড়িয়েও অনেকখানি অবধি ঘোমটা টানা । হাতের মোট বালা ফুটোর ওজন বোধ হয় সাধারণ দাড়িপাল্লায় করা যায় না । তিনি তারস্বরে এই মৎস্তাহারী, দুর্দান্ত বাঙগালী’ ছেলেদের সম্বন্ধে নানারূপ কটুক্তি করতে লাগলেন। ঘোমটাটা কিন্তু টানাই আছে, শুধু প্রচণ্ডবেগে এ-পাশ থেকে ও-পাশ পৰ্য্যস্ত দুলছে। মাছের ওপর মাড়োয়ারীদের একটা স্বাভাবিক বিতৃষ্ণার কারণ আমি ভেবে পেয়েছি। গরু, শূয়োর, ঘোড়া, গাধা, সাপ, বাঙ সব জস্তুর চব্বিই ঘিয়ের সঙ্গে মেশান যায়। কিন্তু মাছের মত এমন একটা সহজলভ্য জীব যে ঘিপ্রস্তুতের কোনও কাজেই লাগে না এইটেই বোধ হয় ওদের সব চেয়ে বিক্ষোভের কারণ । কিন্তু এই মৎস্যভুকু জীবগুলি তাতে কিছুমাত্র বিচলিত হ’ল না । ঠেলে-ঠলে আমরা খানিকট দাড়াবার জায়গা করে নিলুম। સ્વ গাড়ীর দেয়ালে একটা ফ্রেমে তাটা বাংলা অক্ষরে লেখা আছে,—‘মাত্র ১৮ জন বসিবেক । স্বভাবতঃ আমার কৌতুহল হ’ল । গুণে দেখলাম আমাকে নিয়ে সৰ্ব্বযুদ্ধ একচল্লিশটি নরনারী গাড়ীর মধ্যে অধিষ্ঠান করছেন । কোম্পানীর প্রভুরা যাত্রীদের সুবিধা অসুবিধার প্রতি যে অত্যন্ত তীক্ষ দৃষ্টি রাখেন তা আজ নি:সংশয়ে অনুভব করলুম। আরও একটা বিস্ময়কর তথ্য আবিষ্কার করলুম যে, ঘরে পয়সা এলে তাদেরই তৈরি করা আইন যাত্রীর লঙ্ঘন করলেও তারা অসন্তুষ্টই হন না । মনে পড়ে গেল কলকাতার রাস্তার ধারে সার্জেণ্টর কি রকম ভাবে বাজের মত তীব্র দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকে— কোথায় বাসে নিৰ্দ্দিষ্টের চেয়ে একটা বেশী লোক যাচ্ছে তাই ধরবার জন্ত । ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অবস্থায়, একই নিয়মের শাসন-পদ্ধতির কি অদ্ভুত পার্থক্য তা মনে ক'রে শাসক-সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে டிச | গাড়ীটা বেশী বড় নয়। যাত্রীরা বেশীর ভাগই দাড়িয়ে আছে। যারা বসে আছে তাদেরও পা-দুটি ছাড়া অন্ত কোল্প অঙ্গ গাড়ীতে ঢোকাবার উপায় নেই। বেঞ্চের শ্রেণীর মাঝখানকার জায়গাগুলি সবই বিছানায় ভরা। দরজার সামনে দুটো বড় বড় ট্রাঙ্ক দ্বীপের মত মাথা উচু করে পড়ে আছে। দুজন লোক তার উপর কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে রয়েছে। একটি মেয়ে আবক্ষ ঘোমটা টেনে এককোণে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছে। সেই বস্ত্রাবাসের ভিতরে যে একটা সত্যিকার জীবন্ত মানুষ অবস্থান করছে, বাইরে থেকে তা কারুর বুঝবার জো নেই। উপরের বাঙ্কগুলি বিচিত্র আসবাবে ভৰ্ত্তি। স্থানাভাবে একটার উপর একট, তার উপর আর একটা এই রকম ভাবে রাখা হয়েছে। গাড়ীর দোলায় তারা যদি মাধ্যাকৰ্ষণ শক্তির সত্যত প্রমাণ করবার জন্য নীচের দিকে নেমে আসে, তবে গভীর রাতে আধঘুমন্ত যাত্রীরা যে প্রীত হবে না তা বলাই বাহুল্য। বাঙ্কের সেই অদ্ভুত স্থানাভাবের মধ্যে ও একটি ভদ্রলোক অদ্ভুত কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তিনি র্তার বিশাল ভূড়ি ও সুবৃহৎ গুম্বারাজি নিয়ে উপরে একটি বিছানা ক’রে দিব্যি সটান শুয়ে আছেন, আর মাঝে মাঝে অবজ্ঞা মিশ্রিত করুণার সহিত নীচের স্তুপাকার যাত্রীদের দিকে চেয়ে দেখছেন। গাড়ী ছাড়তে তখনও দেরি আছে। ভেবে দেখলুম যে একবার যখন গাড়ীর উপর চড়া গেছে তখন এই কামরাতেই ভ্রমণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । সুতরাং এখন নেমে প্লাটফরমের ওপর খানিকটা বেড়িয়ে বেড়ালে বোধ হয় ক্ষতি হবে না। নেমে পড়লুম। ষ্টেশনের গলায় আলোর মাল৷ দুলছে। নানাদেশের নানাজাতির কালো সাদা লোক উন্মত্ত হয়ে ছুটছে। দূরে সীমাহীন প্রাস্তর অন্ধকারে বিলীন হয়ে গেছে—আর তারই বুকের ওপর স্বদীর্ঘ পাহাড়ের শ্রেণী অস্পষ্ট মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে, যেন জমাট বাধা অন্ধকারের এক একটা বিরাট শুপ। একটা ফাষ্ট ক্লাস কামরার সামনে এসে দাড়ালাম। ছোট কুঠরিটি,—বৈদ্যুতিক পাখার হাওয়ায় ঘরের উড়নশীল জিনিষগুলি চঞ্চল। জানালার দিকে বেঞ্চে । একটি শ্বেতচৰ্ম্ম তরুণী, দেখে আমেরিকান বলে বোধ । হ’ল—রুপে চারিদিক আলো করে বসে আছেন। ॐह}} তৃি দিক ঘিরে তার সমবৰ্ণ তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দেশের ;