বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२३8 করতে এসেছে, এ মেয়ের পক্ষে অপরিচিত একজন পুরুষকে অকস্মাৎ স্বামী ব’লে মেনে নেওয়া বিড়ম্বনা। বড়ঠাকুর এখনও ওর পর, আপন হতে অনেক সময় লাগে। ধন পেতে বড়ঠাকুরের কতকাল লাগল, তার মন পেতে দু-দিন সবুর সইবে না ? সেই লক্ষ্মীর স্বারে ইাটাইটি করে মরতে হয়েছে, আর এই লক্ষ্মীর দ্বারে একবার হাত পাততে হবে না ? কুমুদিনী স্বামীর ব্যবহারে মৰ্ম্মাহত হয়ে মনে করলে এ ধাড়িতে আমার যদি বধুর অধিকার না-ই থাকে, তবে আমি এ বাড়িতে থাকি কিসের সম্পর্কে ? তাই সে বাড়ির দাসীপনা করতে নিযুক্ত হ’ল। সে আলো বাতি রাখার ময়লা ঘরের এক কোণে নিজের বাসস্থান করে নিলে । মধুসুদন কিন্তু মনে মনে কুমুদিনীর জন্য প্রতীক্ষণ করে। রাত্রে উঠে চুপিচুপি যায় কুমুদিনীর ঘরে সে কি করছে দেখতে। সে গিয়ে একদিন দেখলে কুমুদিনী দিব্য নিশ্চিন্ত মনে ঘুমুচ্ছে। মধুসূদনের মনে হ’ল যে তার যেমন ঘুম নেই কুমুদিনীয়ও তেমনি ঘুম না থাকাই উচিত ছিল। কুমুদিনীর মুখের উপর গঠনের আলো পড়তেই সে একটু নড়ল। গৃহস্থের জাগার লক্ষণ দেখে চোর যেমন করে পালার, মধুসূদন তেমনি তাড়াতাড়ি পালাল। তার ভয় হ’ল পাছে কুমুদিনী ওর পরাভব দেখে মনে মনে হাসে। মধুসূদন বুঝতে লাগল যে, তার দিনের চরিত্রের সঙ্গে রাতের চরিত্রের অনেকটা প্রভেদ ঘটছে, এই রাত্রি দুটোর সময় চারিদিকে লোকের দৃষ্টি বলে যখন কিছুই নেই, তখন কুমুদিনীর কাছে মনে মনে হারমান তার কাছে অস্বীকৃত রইল না। কুমুদিনীকে কঠিনভাবে শাসন করার শক্তি মধুসুদন হারিয়ে ফেলেছে, এখন তার নিজের তরফে যে অপূর্ণতা তাই তাকে পীড়া দিতে আরম্ভ করেছে। চাটুজ্জেদের ঘরের মেয়েকে সে বিয়ে করতে চেয়েছিল চাটুজ্জেদের পরাজিত করূষে ব’লে, কিন্তু সে যে এমন মেয়ে পাবে বিধাতা আগে থাকৃতেই যার কাছে হার মানিয়ে রেখে দিয়েছেন, এ সে মনেও ভাবে নি। অথচ এখন সে এ কথা বলবারও জোর মনে পাচ্ছে না যে তার ভাগ্যে একজন সাধারণ মেয়ে হ'লেই ভাল হ’ত যার উপর তার শাসন খাটত। একদিন সে কুমুদিনীর সামুনে নবীন আর মোতির মাকে ডেকে ক’লে দিলে—“কাল থেকে বড়বেয়ের সেবার আমি তোমাদের নিযুক্ত করলুম।" মধুসূদন কুমুকে বুঝিয়ে দিলে তোমার কাছে আমি অসঙ্কোচে হার মানছি। এইবার আরার কুমুদিনীর পালা আরম্ভ হ'ল। সে ভাবতে লাগ ল—এর বদলে কি আছে তার দেবার ? বাইরে থেকে জীবনে যখন বাধ আসে তখন লড়াই করবার জোর পাওয়া যার, তখন স্বয়ং দেবতাই হন সহায়। হঠাৎ সেই বাইরের বিরুদ্ধতা একেবারে নিরস্ত হ'লে যুদ্ধ থামে কিন্তু সন্ধি হতে চায় না । মধুসুদন যে-দিন কুমুদিনীর আংটি হরণ করেছিল সেদিন ওর সাহস ছিল, সে মনে কয়েছিল কুমুদিনী সাধারণ মেয়েরই মতন সহজেই শাসনের অধীন হবে, কিন্তু সে এখন দেখছে কুমুদিনী সহজ মেয়ে মোটেই নর। এখন মধুসূদনের মনে হতে লাগল-কুমুদিনীকে নিজের জীবনের সঙ্গে শক্ত বাধনে জড়াবার একটি মাত্র রাস্ত। অাছে সে কেবল সস্তানের মায়ের রাস্তা । সেই কল্পনাতেই এখন ওর মন ব্যগ্র । কুমুদিনী যাকে ভালবাসেনি তার কাছে আল্পসমর্পণ করতে সঙ্কোচ বোধ করে, হোক না সে তার বিবাহের মন্ত্রপড়। স্বামী। কুমু করে বিদ্রোহ, আর দোষ পড়ে মোক্তির মার ঘাড়ে, কারণ মধুসূদন মনে করে వ్రై ম। যেহেতু কুমুদিনীকে আদর-যত্ন করে সেই হেতু প্তপ্রবাসী; | ఏ99ళు কুমুদিনীকে বশ মানানো যাচ্ছে না তার শাসন প্রতিহত হয়ে ফিরে আসছে। তাই সে মোতির মাধে বাড়ি থেকে বিদার করে দেবার কল্পনা করে, কিন্তু মনের মধ্যে জোর বাধতে পারে না। সে জানে ষে তার সংসারে মোতির মার গৃহিণীপনা নিতান্ত অপরিহায্য। অথচ যেবিবাহিত স্ত্রীর দেহ-মনের উপর তার সম্পূর্ণ দাবি সেও তার পক্ষে নিরতিশয় দুর্গম হয়ে থাকে এও তার সহ হচ্ছিল না । মধুসূদনের সকল কাজে শৈথিলা তার অবহেলা দেখা দিতে লাগল এবং সে নিজে আর অপর সকলে এই দেখে আশ্চৰ্য্য হ’তে লাগ ল । কুমুদিনী নিরস্তর তার অস্তরের ঠাকুরের কাছে কৰ্ত্তব্য-নিৰ্দ্ধারণের নির্দেশ চায়। মধুসুদন যেদিন ভাবলে আমি নিজের মান খৰ্ব্ব করে কুমুর মান ভাঙব, এবং তার হাতে ধ’রে মিনতি করলে সেই দিন কুমুদিনী পড়ল মুস্কিলে। মধুসূদন যখন ক্ষুদ্র হয়, কঠোর হয়, তখন সেটা সহ করা কুমুদিনীর পক্ষে তত কঠিন নয়। কিন্তু তাঞ্জ মধুসূদনের এই নম্রতা, এই তার নিজেকে খৰ্ব্ব করা সম্বন্ধে কুমু যে কি করবে ত৷ সে স্থির করতে পারে না। হৃদয়ের যে-দান নিয়ে সে এসেছিল তা তো খলিত হয়ে ধূলায় পড়ে গেছে। তথাপি কুমু স্বামীর হুকুম মানে, কিন্তু তার আস্তরিক সতীত্ব তাকে ধিক্কায় দেয়, সে তার ঠাকুরের কাছে নালিশ করে তার ঠাকুরেরই বিরুদ্ধে, কেন তিনি তাকে এই অশুচিত৷ থেকে বাচবার পথ দেখিরে দিচ্ছেন না। তার মনে হচ্ছে একটা কালে। কঠোর ক্ষুধিত জর বাহির থেকে তাকে যেন গ্রাস করছে । ষে-পরিণত বয়স শাস্ত স্নিগ্ধ স্বগম্ভীর, মধুসূদনের তা নয় ; যা লালারিত, যার প্রেম বিষয়াশক্তিরই সজাতীয়, তারই স্বেদাক্ত স্পর্শে কুমুর এত বিতৃষ্ণ। কুমুদিনী এই অশুচিত৷ থেকে পালাবার একমাত্র উপায় দেখে শিশু মোতির সংসর্গে । এই শিশু মোতি তার জেঠমাকে পরিপূর্ণ ভাবে ভালবাসে। কুমুদিন মোতির সাহচর্য্যে নিজের অশুচিত। শোধন করে নিতে চার বলে মধুসুদন বালকটির উপরও রূঢ় ব্যবহার করে, আর তার সকল আঘাত গিয়ে লাগে কুমুদিনীকে, আর সে হয়ে উঠে আরও আপনার মধ্যে আপনি অবরুদ্ধ। মধুসুদন বুঝতে পারে না ষে সে যা চায় ত৷ পাবার বিরুদ্ধে ওর স্বভাবের মধ্যেই একট। মস্ত বাধা রয়েছে । মধু যখন হুকুম করে কুমুদিনীর প্রেম আদায় করতে চায়, তখন একদিন কুমুদিনী দেখলে নবীন আর মোতির মীর মধ্যে প্রেমলীলা। তাদের সেই প্রেমলীলা কেমন সহজ আর সুগ্ৰী, আর তায় পাশে মধুসূদনের ব্যবহার কি বিস্ত্র কুৎসিত বীভৎস । মধুসুদন দেখেছে কুমুদিনীর দাদা বিপ্রদাসের মধ্যে ঔদ্ধত্য একটুও নেই, আছে একট। দূরত্ব। বিপ্রদাসের কাছে মধুসুদন মনে মনে খাটো হয়ে থাকে, তাইতে তার রাগ ধরে । সেই একই সুন্ন কারণে কুমুর উপরেও মধুসুদন জোর করতে পারছে না-আপল সংসারে যেখানে সব চেরে তার কর্তৃত্ব করুবার অধিকার সেইখানেই সে যেন সব চেয়ে হ’টে গিয়েছে। এবং সেই জন্যেই কুমুর প্রতি তার রাগের বদলে, আকর্ষণ দুৰ্নিবার বেগে প্রবল হয়ে উঠছে, জার রাগ বাড়ছে কুমুদিনীর দাদা বিপ্রদাসের উপর, কারণ মধুসূদনের সন্দেহ যে বিপ্রদাসের জাদর্শ আর শিক্ষাতেই কুমুদিনী এমন ভাবে গঠিত হয়ে উঠেছে। তার লোহ অমূলকও নয়। .” মধুসুদন হিংস্র হয়ে বিপ্রদাসকে পীড়ন করতে লাগল, স্থার মনে মনে এও ছিল যে, বিপ্রদাসকে শাস্তি দিলে কুমুদিনীকেও শাস্তি দেওয়৷ , হবে। বিপ্রদাস শান্তভাবে মধুর সব কুব্যবহার সহ করতে লাগলেন।. প্রিদাস বনেদী ঘরের অভিজাত ভদ্রলোক, তার কাছে টলষ্ট: