বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8० জাত্রেয়ী বিশ্ববার রচিত মস্ত্রগুলিতে ঋগ্বেদের সময়ে স্ত্রীলোকগণ গৃহে ও সমাজে কিরূপ উচ্চপদ প্রাপ্ত হইতেন তাহার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। ঋক্গুলিতে আরও জানা যায় যে, বিশ্ববার বাহিরে উচ্চপদধারী মহীয়সী মহিলা ছিলেন সত্য; কিন্তু গৃহে তিনি পতিপ্ৰাণ। প্রেমময়ী নারীই ছিলেন। ব্ৰহ্মবাদিনী অপালা ঋষি অত্ৰিমুনির কথা ছিলেন। তিনি ঋগ্বেদের অষ্টম মণ্ডলের ৯১ হুক্তের ৭টি ঋক্ রচনা করিয়া ইত্রের গুণাবলী কীৰ্ত্তন করেন। ঋষি অপাল ত্বক্রোগে আক্রান্ত হইয়। স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত হন। সোমরস ইন্দ্রের প্রিয় ও রুচিকর জানিতে পারিয়া অপালা সোমরুল দান করিবার জন্ত ইন্দ্রের স্তব করেন। পরে সোমপানে সস্তুষ্ট হইয়া ইন্দ্র উহাকে বর দান করিতে সন্মত হন, এবং বর প্রার্থনা করিতে বলেন। তাহাতে অপালা কহিতেছেন--"হে ইন্দ্র, তুমি আমার পিতার মস্তক, তাহার ক্ষেত্র এবং ত্বৰূরোগ-জনিত রোগমুন্ত আমার অঙ্গ—ইহাদের সকলকেই উৎপাদনশীল কয়, এই আমার প্রার্থন। তখন ইন্দ্র প্রথম দুইটি প্রার্থনা পুরণ করিলেন এবং অপালার দেহ ঠাহীর রথচক্রের নেমির অন্তরালে প্রবেশ করাইয়া দিয়া উহাকে তিনবার আকর্ষণ করিলেন। এইরূপে রোগমুক্ত করিয়া তাহার তিনটি প্রার্থনাই পূর্ণ করিলেন। অপাল রোগমুক্ত হইয়। অত্যন্ত কৃতজ্ঞচিত্তে বলিতেছেন, ‘হে শতক্ৰতু। তুমি তিনবার শোধন করিয়া অপালাকে স্বয্যের স্থায় উজ্জ্বল চৰ্ম্মবিশিষ্ট করিয়াছিলে |’ দশম মণ্ডলের ৬• স্বত্তের ১২টি ঋকের মধ্যে যষ্ঠ ঋক্টি নারী-ঋষি জগন্তা-ভগিনীর রচিত। ইহার চারিপুত্র ইবুকুবাণীয় রাজা অসমাতির গৃহ-পুরোহিত ছিলেন। কোনও কারণে রাজা অসমাতি সেই পুত্রদিগকে কচুত করিয়া উহাদের স্থলে অন্ত পুরোহিত নিযুক্ত করেন। নবনিযুক্ত পুরোহিতগণ বন্ধু নামক অগস্ত্যভগিনীর এক পুত্রকে নিহত করিলে, অন্ত তিন পুত্র শত্রুদমন করিবার জন্ত রাজা অসমাতির সাহায্য প্রার্থনা করেন। ষষ্ঠ ঋকে দেখিতে পাই, অগস্ত্যভগিনী নিজ পুত্রের মঙ্গলার্থে রাজা অসমতির সাহায্য প্রার্থনা করিতেছেন—’হে রাজন! অগস্ত্যের নগুদিগের (দৌহিত্রদিগের) জন্য রথে লোহিত অৰ যোজনা করিয়া তাহাদের শত্রুধিনাশে অগ্রসর হও। ইহার পরবত্তী ঋক্গুলিতে সুবন্ধুর পুনর্জীবনের উল্লেখ আছে দেখিতে পাওরা যায় – এই অগ্নি মাতাস্বরূপ, পিতাস্বরূপ, প্রাণস্বরূপ। হে সুবন্ধু, এই অগ্নি তোমার মনকে ধারণ করিয়াছেন, তাহাতে তুমি জীবিত ও কল্যাণসম্পন্ন হইবে, তোমার মৃত্যু অবস্থা অপগত হইবে। ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ১৭৯ স্বত্ত্বের প্রথম দুইটি ঋক্ অগস্ত্যের পত্নী গোপামুদ্র কর্তৃক কামদেবতা রতিদেবীর উদেশে রচিত। যোগী, সংযমী, সম্ভোগপূহাশূন্ত ঋষি অগস্ত্য দিবারাত্রি যজ্ঞকৰ্ম্মে নিযুক্ত থাকিয়া সাধ্বী স্ত্রীর নিকট হইতে সৰ্ব্বদা নিজেকে দূরেই রাখিতে চেষ্ট৷ করিতেন। তপস্বী স্বামীর সান্নিধ্য কামনা করিয়া লোপামুদ্রা অগস্তাকে কঠোর সংযম ত্যাগ করিয়া রতিদেবীর সেবা করিতে অনুরোধ স্ত্র প্রবাসী ; | করিতেছেল--'হে অগস্তা, বহুবৎসরাবধি দিবারাত্রি তোমার সেবা করিয়া এখন আমি জরা প্রাপ্ত হুইয়াছি। প্রাচীন, সত্যবাদী, সংযমী বহু ঋষি যজ্ঞাদি কৰ্ম্মে রত থাকিয়াও গৃহ-ধৰ্ম্ম পালন করিতেন--সুতরাং হে তপস্বী, তুমি আমার নিকট আগমন কর। এই সুক্তেরই তৃতীয় ঋক্ দুইটি স্বয়ং অগস্ত ঋষির রচিত এবং তাহা হইতে জানা যায় যে পত্নীর বিনীত অনুরোধ উপেক্ষা করিতে সক্ষম না হওয়াতে তিনি গৃহধৰ্ম্ম এবং যুঞ্জ-ধ্যানাদি একই সঙ্গে সম্পন্ন করিয়াছিলেন। অগস্ত বলিতেছেন—‘যদিও আমি তপস্যা ও সংযমে নিযুক্ত তথাপি আমরা সমস্ত ভোগই উপভোগ করিতে পারি। লোপামুদ্রা মহাপ্রাণ পুরুষকে উপভোগ করুক। অঙ্গির ঋধির কন্যা এবং যাদব অসঙ্গের পত্নী শশ্বতী নাম্নী ব্ৰহ্মবাদিনী অষ্টম মণ্ডলের প্রথম স্বত্তের শেষ ঋক্টি রচনা করেন। রাজপুত্র অসঙ্গ শাপগ্ৰস্ত হইয়া পুরুষত্ব বর্জিত হন। স্বামীকে শাপমুক্ত করিবার জন্য শশ্বতী বহুবৎসর ধরিয়া কঠোর তপশ্চৰ্য্যা করেন। অসঙ্গ স্ত্রীর তপস্তার ফলে এবং মেধাতিথির প্রভাবে পুনরায় পূৰ্ব্ব রূপ প্রাপ্ত হইলে শম্বত হর্যোৎফুল্ল হইয়া বলিতেছেন—“আৰ্য্য! তুমি শাপমুক্ত হইয়া, এক্ষণে জীবন উপভোগ করিতে সক্ষম হইলে । ঋগ্বেদে শশ্বতীকে প্রকৃত নারী বলা হইয়াছে। তিনি স্বামীর দুঃখে দুঃখিত, এবং তাহার আনন্দে আনন্দিত হইতেন । বৃহস্পতির কন্যা ব্ৰহ্মবাদিনী রোমশ ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ১২৬ লুঞ্জের সপ্তম খকের রচয়িতা। অসীম প্রতাপশালী রাজা ভাব্যস্বনয় ইহার স্বামী ছিলেন। রাজা ভাব্যস্বনয় অল্পবয়স্ক ও নিজের তুলনায় নিতান্ত অনুপযোগী বিবেচনায় পত্নীকে পরিত্যাগ করেন। এই মন্ত্রটিতে রোমশা নিজ অঙ্গে প্রথমযোধনের আগমন অনুতব করিয়া যুবতিসুলভ আনলে স্বামীকে উদ্দেশ করিয়া বলিতেছেন-নিকটে আসিয়া দেখ, এক্ষণে আমি তোমার উপযুক্ত পত্নী হইয়াছি । বলা বাহুল্য, রাজা ভাব্যস্বনয় স্ত্রী রোমশাকে পুনরায় গ্রহণ করিয়া ভোগমুখে লিপ্ত হইয়াছিলেন। উক্ত স্থক্তের যষ্ঠ খক্‌টি ভাব্যস্বনয়ের রচনা-তিনি পত্নীকে লক্ষ্য করিয়া বলিতেছেন—এই রমণী আমার সহিত পুনরায় সুখে মিলিত হইয়াছে।’ দশম মণ্ডলের ১২° স্বত্তের ৮টি ঋক্ অস্থ৭ ঋষির দুহিতা বা নায়ী স্ত্রীববি-রচিত। এই মন্ত্রগুলি ‘দেবীযুক্ত নামে প্রচলিত। ইহার রচিত ঋক্গুলিতে বক্তা বিশ্বের সহিত নিজের একাত্মভাব উপলব্ধি করিয়া আপনাকে সৰ্ব্বনিয়ন্ত ও সর্বনিৰ্ম্মাঙ বলিয়া পরিচয় দিতেছেন। এই সকল স্ত্রী-ঋক্রচয়িতাদিগের ঋক্ রচনা হইতে এইটুকু বুদ্ধ যায় যে, সে যুগে স্ত্রীলোকেরাও মন্ত্র লিখিতেন এবং সেই মন্ত্ৰ বেদমন্ত্র বলিয়া সমাদৃত হইত, সে সমাজে নারীর স্থান যে অতি উচ্চে ছিল তাহাতে কোনও সন্দেহ নাই। (জয়শ্রী, বৈশাখ, ১৩৩৯ ) SOOāు