বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬০২ S99áు পার্সিজান করাটাকেই আচারনিষ্ঠ মুসলমান যদি সাধুত ব’লে জ্ঞান করেন তবে ইংরেজী স্কুলপাঠ্যের ভাষাকেও মাঝে মাঝে পারসি বা আবৃবি ছিটিয়ে শোধন না করেন কেন ? আমিই একটা নমুনা দিতে পারি। কীটুসের হাইপারিয়ন নামক কবিতাটির বিষয়টি গ্রীসীয় পৌরাণিক, তথাপি মুসলমান ছাত্রের পক্ষে সেটা যদি বর্জনীয় না হয় তবে তাতে পার্সি-মিশেল করলে তার কি রকম শ্ৰীবৃদ্ধি হয় দেখা থাকৃ,— Deep in the Saya-i-ghamagin of a vale, Far sunken from the mafas-i-hayat af2a-i-morn, Par from the aishim noon and eve's one star, Sat ba moo-i-safid Saturn Khamush as a Sang.* জানি কোনো মৌলবী ছাহাব প্রকৃতিস্থ অবস্থায় ইংরেজী সাহিত্যিক ভাষার এ রকম মুসলমানীকরণের চেষ্ট৷ করবেন না। করলেও ইংরেজী যাদের মাতৃভাষা, এদেশের বিদ্যালয়ে তাদের ভাষার এ রকম বাঙ্গীকরণে উচ্চাসন থেকে তাদের মুখ ভ্ৰকুটিকুটিল হবে। আপোসে যখন কথাবাৰ্ত্ত চালাই তখন আমাদের নিজের ভাষার সঙ্গে ইংরেজী বুলির হাস্যকর সংঘটন সৰ্ব্বদাই ক’রে থাকি ; কিন্তু সে প্রহসন সাহিত্যের ভাষায় চলতি হবার কোনো আশঙ্কা নেই। জানি বাংলা দেশের গোড়া মক্তবেও ইংরেজী ভাষা সম্বন্ধে এ রকম অপঘাত ঘটবে না ; ইংরেজের অসন্তুষ্টিই তার একমাত্র কারণ নয়। শিক্ষক জানেন পাঠ্যপুস্তকে ইংরেজীকে বিকৃতি করার অভ্যাসকে • পারসী ভাষায় আমার অল্পবিস্তর পাণ্ডিত্য আছে এমন অমূলক প্রমের স্বষ্টি করে গৰ্ব্ব করতে চাইনে। ধরা পড়বার পুৰ্ব্বে কবুল করচি যে পরের সাহায্য নিয়েচি। মক্তবে ব্যবহার্য্য যে পাঠ্যপুস্তকের নমুনা প্রবাসীতে দেখা গেল তা রচনা করতে হ’লে অনেক মুসলমান লেখককেই পরের সাহায্য নিতে হবে । আমি এক মুসলমাম বন্ধুর সঙ্গে কিছু কিছু পারসীর আলোচনা করি । তিনি যে-পারসী ভাষা জানেন তা ভারতে প্রচলিত বিকৃত পারসী নয়, এ ভাষা যাদের মাতৃভাষা, ভারতবর্ষের বাইরে তাদের কাছ থেকে উার পারসীর বিদ্যা অর্জিত ও মার্জিত, কিন্তু তিনিও হুর্ঘ্য অর্থে তাম্বু শব্দের প্রয়োগ জানেন না। প্রশ্রয় দিলে ছাত্রদের ইংরেজী-শিক্ষায় গলদ ঘটবে, তার ঐ ভাষা সম্যকরূপে ব্যবহার করতে পারবে না। এমন অবস্থায় কীট্‌সের হাইপীরিয়নকে বরঞ্চ আগাগোড়াই ফালিতে তর্জমা করিয়ে পড়ানো ভাল তবু তার ইংরেজীটিকে নিজের সমাজের খাতিরেও দো-আঁশলা করাটা কোনো কারণেই ভাল নয়। সেই একই কারণে ছাত্রদের নিজের খাতিরেই বাংলাটাকে খাটি বাংলারূপে বজায় রেখেই তাদের শেখানো দরকার । মৌলবী ছাহাব বলতে পারেন আমরা ঘরে যে বাংলা বলি সেটা ফারসি আরবী জড়ানে, সেইটাকেই মুসলমান ছেলেদের . বাংলা বলে আমরা চালাব । আধুনিক ইংরেজী ভাষায় র্যাদের এংলোইণ্ডিয়ান বলে, র্তার ঘরে যে-ইংরেজী বলেন, সকলেই জানেন সেটা আন্‌ডিফাইল্ড আদর্শ ইংরেজী নয়-স্বসম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতবশত র্তারা যদি বলেন যে, তাদের ছেলেদের জন্যে সেই এংলোইণ্ডিয়ানী ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা না করলে তাদের অসম্মান হবে, তবে সে কথাটা বিন হাস্যে গম্ভীরভাবে নেওয়া চলবে না। বরঞ্চ এই ইংরেজী তাদের ছেলেদের জন্যে প্রবর্তন করলে সেইটেতেই তাদের অসম্মান এই কথাটাই তাদের অবশ্য বোঝান দরকার হবে। হিন্দু বাঙালীর স্বৰ্য্যই স্বৰ্য্য আর মুসলমান বাঙালীর স্বৰ্য্য তাম্বু, এমনতর বিদ্রুপেও যদি মনে সঙ্কোচ না জন্মে, এতকাল একত্রবাসের পরেও প্রতিবেশীর আড়াআড়ি ধরাতলে মাথা-ডাঙাভাঙি ছাড়িয়ে যদি অবশেষে চন্দ্রসুর্ষ্যের ভাষাগত অধিকার নিয়ে অভ্রভেদী হয়ে ওঠে, তবে আমাদের ন্যাশনাল ভাগ্যকে কি কৌতুকপ্রিয় বলব, না বলব পাড়া-কুঁছলে । পৃথিবীতে আমাদের সেই ভাগ্যগ্রহের যার প্রতিনিধি র্তারা মুখ টিপে হাসচেন ; আমরাও হাসতে চেষ্টা করি কিন্তু হাসি বুকের কাছে এসে বেধে যায়। পৃথিবীতে কমু্যুনাল বিরোধ অনেক দেশে অনেক রকম চেহারা ধরেছে, কিন্তু বাংলা দেশে সেটা এই যে কিম্ভূতকিমাকার রূপ ধরল তাতে আর মান থাকে না ।