পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१३९ “ধে-মুসলমানদিগকে আমরা যুদ্ধে পরাজিত করিয়া পঞ্জাবে প্রভুত্ব করিয়াছি, তাহদের প্রভুত্ব কখনই সহ করিব না।” বিস্তর শিখ এই মৰ্ম্মের শপথ গ্রহণ করিয়াছেন এবং পঞ্চাবে মুসলিম প্রভুত্ব স্থাপিত হইলে তাহার বিরুদ্ধে লড়িবার জন্য এক লক্ষ শিখ স্বেচ্ছাসেবক ংগ্ৰহ করিবার আয়োজম হইয়াছে। কিন্তু একটা কথা কেহই মনে রাপিতেছেন না। সকলেই জানেন, ভারতবর্ষে ভিন্ন ভিন্ন ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে অমিল অসম্ভাব বিরোধ এবং তৎসমুদয়ের ক্ৰমবৰ্দ্ধমানত্ব ইংরেজপ্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার ও উহার দীর্ঘকালস্থায়িতার একটা প্রধান কারণ । ইহাও সহজে বুঝা যায়, যে, ভারতবর্ষে ইংরেজের প্রভুত্বের অবসান দুই প্রকারে হইতে পারে—প্রথম ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে অমিল অসম্ভাব ও বিরোধ দূর হইয়া ঐক্য ও সদ্ভাব স্থাপিত হইলে, দ্বিতীয় কোন এক সম্প্রদায় ইংরেজ-প্রভূত্বের পরিবর্তে নিজেদের প্রভৃত্ব স্থাপন করিতে পারিলে। কিন্তু প্রথম অবস্থাটা ঘটে নাই বলিয়াই ত ব্রিটিশ মন্ত্রীদের হাতে তথাকথিত মধ্যস্থতা ও ভাগবাটোয়ার করিবার স্ববিধা গিয়া পড়িয়ছে। দ্বিতীয়তঃ, কোন সম্প্রদায়ই ইংরেজ প্রভৃত্বের পরিবর্তে নিজেদের প্রভুত্ব স্থাপন করিতে পারে নাই। সকল সম্প্রদায়ের এই শক্তিহীনতার সময়ে ইংরেজ হয় হিন্দুকে নয় মুসলমানকে রাজা করিয়া ভারতবর্ষের মত এত বড় একটা লাভের জমিদারী ছাড়িয়া দিয়া চলিয়া বাইবে, ইংরেজকে এমন মহামুভব আহাম্মক মুসলমান বা হিন্দু কি প্রকারে মনে করিতে পারেন, জানি না । বস্তুত:, ভারতবর্ষের বর্তমান অবস্থায় হিন্দুরাজ বা মুসলমানরাজ কিছুই প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না, হইবে না। ইংরেজরা কাহারও হাতে রাজত্ব তুলিয়া দিতে পারে না, দিবে না । তাহারা নিজেরাই প্রভু থাকিতে চায় ও থাকিবে ; কেবল অবস্থাবিশেষে ও স্থলবিশেষে কখনও কোথাও হিন্দু দ্বারা অন্য সময়ে অন্যত্র মুসলমান দ্বারা নিজেদের কার্ষ্যসিদ্ধি করিবে, এবং যথন যেখানে যাহার দ্বারা কাৰ্য্যসিদ্ধি হইবে সে তখন সেখানে আজ্ঞাকারী ভূত্যের বক্শিশ পাইবে । 4. S99శు স্বরাজের মানে নানা রকম। কোন দেশ সেই দেশের ব্যক্তিবিশেষের দ্বারা, শ্রেণী বা সম্প্রদায়বিশেষের দ্বারা, কিংবা সকল লোকের প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হইলে, প্রত্যেক রকম শাসনকেই স্বরাজ বলা যাইতে পারে। কোন রকম স্বরাজই ভারতবর্ষে স্থাপিত করিবার ইচ্ছা ব্রিটিশ গবন্মেণ্টের আছে এরূপ প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে না। রাজত্বের, প্রভূত্বের, যাহা যাহা একস্তিপ্রয়োজনীয় অঙ্গ ও অংশ, তাহার প্রত্যেকটিতে চূড়ান্ত ক্ষমতা “সেফগার্ড” নাম দিয়া ইংরেজরা আপনাদের হাতে রাখিতে চায় । অতএব সকলে আশ্বস্ত হউন—ইংরেজ-রাজত্বের পরিবর্ত্তে হিন্দু-রাজত্ব বা মুসলমান রাজত্ব স্থাপিত হইবে না। ইংরেজদের প্রভুত্ব অক্ষুণ্ণ থাকিবে । বৰ্ত্তমান অবস্থার সহিত ভবিষ্যতে প্রভেদ এই হইবে, যে, অন্যায় অবিচার অত্যাচার উপদ্রব ঘটিলে তাহার দোষটা সময়বিশেষে, অবস্থাবিশেষে ও স্থলবিশেষে প্রয়োজনমত হিন্দুদের বা মুসলমানদের কিংবা সমুদয় ভারতীয়ের উপর আরোপ করা চলিবে । তৃতীয় শ্রেণীর মহিলা রাজনৈতিক বন্দী ভারতবর্ষীয় ব্যবস্থাপক সভায় যে-সব , প্রস্তাব বক্তৃতা তর্কবিতর্ক ও প্রশ্নোত্তর হয়, তাহা সপ্তাহে সপ্তাহে মুদ্রিত হয় । আগে খবরের কাগজের সম্পাদকের অনেকে তাহ। বিনামূল্যে প্রতি সপ্তাহে পাইতেন, এখন দাম দিয়া কিনিতে হয়, কিন্তু তাহা হইলেও পাইতে অসঙ্গত বিলম্ব হয় না। বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার তর্কবিতর্ক বক্তৃতা প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়, কাগজের দাম ছাপাই থরচ সেলাইয়ের খরচ যাহা হইবার তাহা হয় । কিন্তু সপ্তাহে সপ্তাহে এক এক খণ্ড বিতরিত বা বিক্রীত হয় না, একেবারে এক এক বৃহৎ ভলুমি হইয়া বাহির হয়। তাহাও এত বিলম্বে হয়, যে, চলতি বিষয়ের আলোচনায় সেগুলা কোন কাজে লাগে না, ভবিষ্যৎ ঐতিহাসিকের কাজে লাগিতে পারে। এইরূপ ব্যবস্থার ও বিলম্বের অসুবিধ অনেক । দৈনিক কাগজে সমুদয় বক্তৃতা ও তর্কবিতর্ক এবং প্রশ্নোত্তর বাহির হয় ন—স্থানাভাবে তাহা হইতে পারে না,