বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোড়াকপালী শ্রমাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় কচি ছেলে লইয়া সংসারের সব কাজ করিতে কুসুমের হিমসিম লাগিয়া যায়। ছেলেটাও হইয়াছে আচ্ছ, কাজের সময়েই চোখে ওর একদম ঘুম নাই। কাথায় চিং করিয়া শোয়াইয়া দিলে ও-বাড়ির সুশীলার ছেলের মত একটু যে খেলা করিবে, তাও নয়। কোল হইতে নামাইলেই কান্না। সংসার অবশ্য ছোট,—শুধু স্বামী তারক। কিন্তু যত ছোট হউক, সংসার ভ ? সবই করিতে হয়। সকালে উঠিয়া ঘরলেপ বাসন-মাজা উন্থন-ধরানো তারককে চা জলথবীর করিয়া দেওয়া, ছেলেকে দুধ খাওয়ানো, ন’টার মধ্যে রান্না শেষ করা,--এর কোন কাজটা একদিন বাদ দিলে চলে কে বলিতে পারে বলুক দেখি ! এ ত গেল একবেলার বড় বড় কাজের হিসাব, খুটিনাটি কাজ অমন হাজারটা আছে । সামান্য এক গেলাস জল ভরিয়া দেওয়ার কথাটাই ধর । কোথায় গেলাস খুজিয়া আন, কলসীর কাছে গিয়া জল গড়াও, যে জল চাহিয়াছে তার কাছে পৌছাইয় দাও, গেলাস খালি করিয়া দেওয়া পর্যন্ত দাড়াইয়া থাক, তারপর যেখানকার গেলাস সেখানে রাখিয়া এস—তবে ওই সামান্ত কাজের পরিসমাপ্তি । ছেলে-কোলে মানুষ অত করিতে পারে ? তবু সবই করিতে হয়। চাকর বামুন রাখিবার সামর্থ্য নাই। থোকা হইবার পর হইতেই কুম্বমের শরীরটাও ভাল যাইতেছে ন। মাঝে ত ক'দিন খুব জরেই ভুগিল । সকালবেল বিছানা ছাড়িয়া উঠিতে আজকাল তার বড় কষ্ট হয়, প্রত্যেক দিন শেষবেলায় তার বুক জলে ও সন্ধ্যার সময় মাথা ধরে । মাথার যন্ত্রণাটাই সবচেয়ে অদহ । মনে হয়, গল ছিড়িয়া মাথাটা ঢিপ করিয়া মাটিতে পড়িয়া যাইবে-এত ভারী। গেলেও যেন বচা যায়। মাথা ত আছে সকলেরই, মাথ লইয়া এমন ভোগাম্ভ হয় কাহার? ভারক অবশ্য বলে,—একটা তেলটেল এনে দিই কুসুম। চুল যে সব উঠে গেল ! তেলের দাম কুসুমের অজানা নয়। এক টাকায় এই এতটুকু একটা শিশি । মাথায় তেল মাখার জন্য সে বুঝি তার খোকার দুধ নেওয়া বন্ধ করিবে ? - ‘পোড়াকপাল আমার ! তেলের জন্য বুঝি ? বুড়ী বোঁকে আর আদরটাদর কর না, মনের দুঃখে তাই চুল উঠে যাচ্ছে ? কথাটা থাটি পরিহাস । থাটি পরিহাস মানে কথাটায় সত্যের এতটুকু আমেজও নাই। তারক ভারি বেী-পাগলা লোক। রূপকথার রাজপুত্রের মত সে যেন সাত সমুদ্র তের নদী পার হইয়া অনেক বাধাবিপত্তি জয় করিয়৷ অনেক দুঃখ-কষ্ট পাইয়া তার রাজকন্যাকে মাত্র কাল পরশু উদ্ধার করিয়া আনিয়াছে, চার বছরের পুরানো বোঁকে সে এত ভালবাসে। সেদিনের জরের কথাটাই কুসুম ভাবে । সে মরিতে বসে নাই, তবু নাওয়া-খাওয়া ঘুমের কামাই ত ছোট কথা, আপিস কামাই হইতেও তারকের বাকী ছিল না । এত বেশী ভালবাসার আওতায় কুহুম যেন কেমন হইয়া গিয়াছে। লতাকে ঢাকিয়া রাখিয়াছে মেঘেরই ছায়া, রোদ অার গায়ে লাগিতে পায় না। সাধারণ গৃহস্থঘরের মেয়ে সে, তার মামাবাড়ি চিরকাল মাটির প্রদীপ জ্বলিত । অত্যন্ত শাস্ত আবেষ্টনের মধ্যে সে মানুষ হইয়াছে, হৃদয়ের কারবার যেখানে ছিল টিমে এবং সংক্ষিপ্ত,-থানিক ভালবাসা, খানিক লাঞ্ছনা, খানিক অবহেলা অশ্রদ্ধা। অনভ্যস্ত এত তীব্র অনুভূতি তার সয় না। সে ঝরণার ধারের ছোট চার গাছ, আসি ৷ পড়িয়াছে প্রকাগু নদীর ধারে,-ধেমনীতে বার মাসই বন্য । . . .