পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

११8 অামার মতে একতার জন্য মনুষ্যত্ব ও স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ববিকাশ বর্জন করা যাইতে পারে না।" উঈনার বলিলেন—“মহাশয়, অনেক সময়ে জোর করিম অনৈক্য ও বৈচিত্র্য ডাকিয়া আনা হয় । ইয়ো রোপে এইরূপ দেখিতে পাই। ফরাসী রুশো Emile গ্রন্থে প্রকৃতিপূজার অবতারণা করিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ফ্রান্স ও জাৰ্ম্মানি ভরিয়া রুশোর শিষ্যবৃন্দ প্রকৃতি, প্রাকৃতিক জীবন, সরলতা, অকৃত্রিম স্বভাব, শিশুচরিত্র, দরিদ্র কৃষকসমাজ, জনসাধারণ ইত্যাদির মহিম৷ প্রচার করিতে লাগিলেন। সাহিত্যের বাজারে "অসভ্যতা,” লোক-সাহিত্য, পল্লীভাষা ইত্যাদি সমাদর করা একটা ফ্যাশনে পরিণত হইল। হার্ডার, ক্লপষ্টক, গ্রিম ইত্যাদি সাহিত্যসেবীগণ জার্মান ভাবুকতার আন্দোলনে ধুবুন্ধর। ইহাদিগের দেখাদেখি ইয়োরোপের অলিগলিতেও এইরূপ পল্লী-মাহাত্ম্য, শ্রমজীবী-মাহাত্ম্য, জনসাধারণ-মাহাত্মা প্রকৃতি-মাহাত্মা ইত্যাদি প্রচারিত হইতে লাগিল। সকল স্থানেই নিজ নিজ কেন্দ্রের বিশেষত্ব ও স্বাতন্ত্র্য সম্বন্ধে ঐতিহাসিক গবেষণা চলিল। যে-সকল স্থানে প্রাচীনত্বের কোন চিহ্ন নাই সেই সকল স্থান হইতেও প্রাচীন সরলতার নিদর্শনসমূহ আবিষ্কৃত হইতে লাগিল। রুশোপন্থী ভাবুকের সেই-সমূদয় দেখিয়া রোমাঞ্চিত হইলেন ! মহাশয়, এই প্রণালীতে আজ নরওয়ে সুইডেন ও ডেনমার্ক তিনটি ভিন্ন ভিন্ন জাতিতে পরিণত হইয়াছে—অথচ ইহাদের লোকসংখ্যা সৰ্ব্বসমেত এক কোটি মাত্র। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই তিন দেশের লোকের বৈচিত্র্যের কথা স্বপ্নেও ভাবে নাই—রোমাটিক আন্দোলনের পাল্লায় পড়িয়া অভ্যাজ ইহার তিনটি স্বতন্ত্র (nation) নেশনে পরিণত । এই ক্ষেত্রে দেখিতেছি সাহিত্যসেবীদিগের হুজুগে অনৰ্থক অনৈক স্বঃ হইয়াছে। সেইরূপ সার্ভিয়, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া ইত্যাদি জাতির বৈচিত্র্য অষ্টাদশ শতাব্দীতে কেহ কথনও শুনে নাই । আজ এমন কি আলবেনিয়ারও একটা স্বতন্ত্র জাতিগত ভাষা হুষ্ঠ হইতে চলিয়াছে। কবে শুনিব বাঙ্গালাদেশেও উত্তরবঙ্গ পূৰ্ব্ববঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ নামে তিনটি nation গড়িবার আন্দোলন চলিতেছে!” উটনার নিজের পুত্রকন্যাগণকে গৃহে শিক্ষা দিয়৷ প্রবাসী—অশ্বিন, ১৩২২ [ »4* लाभ, »म १७ থাকেন। ইহার শিক্ষাপ্রণালীর গুণে কম সময়ে অধিক শিথিতে পারা যায়। ইহার প্রথম পুত্র এই উপায়ে বিশ বৎসরের পূৰ্ব্বে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের পি.এইচ ডি উপাধি পাইয়াছে। সাধারণতঃ ২৫ বৎসরের পূৰ্ব্বে কোন ছাত্র এই ডিগ্রি লাভ করিতে পারে না। শ্ৰীবিনয়কুমার সরকার । 6. মুসলমানদেশের নারীসমাজ আজকাল সমস্ত জগং জুড়িয়া একটা পরিবর্তনের হাওয়া উঠিয়াছে। পুরাতনের শৃঙ্খল ছিড়িয়া জগৎ নবীনের সদ্ধানে চুটিয়াছে। রক্ষণশীলতার যুগ কাটিয়া গিয়াছে ; প্রাচীন প্রথার নিকট মাথা নত করিয়া চিরকালের ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ হইয়া থাকিতে কেহ আর রাজি নয়। এই উৎসাহের আগুন যে কেবল পুরুষের অধিকৃত আধথানা পৃথিবীতেই লাগিয়াছে তাহ নয়, নারীর অন্তঃপুরেও গিয়া পৌছিয়াছে। কেহই স্থির থাকিতে পারিতেছে না, অচলায়তনের পুরাতন প্রাচীর ভাঙ্গিয়া সকলে মুক্ত আাকা শের তলে দাড়াইয়া আপন-আপন কাজ বুঝিয়া লইতেছে। প্রাচ্য ও প্রতীচ্য সকল দেশেই নারী পুরুষের অনেক নীচে পড়িয়া রহিয়াছে ; কিন্তু এই অস্বাভাবিক নিয়ম চিরস্থায়ী হইতে পারে না ; প্রকৃতি কাহাকেও আপনার অধিকার হইতে বঞ্চিত থাকিতে দিবে না। প্রতীচ্যজগতে নারীর অধিকার লইয়া প্রলয়ব্যাপার বাধিয়া গিয়াছে। তাহারা স্বাধীনতার স্বাদ বছপুৰ্ব্ব হইতেই কিয়ং পরিমাণে পাইয়াছেন বলিয়। কার্য্যক্ষেত্রে প্রাচ্যরমণীর অগ্ৰগামিণী হইয়াছেন, কিন্তু অন্তঃপুরে আবদ্ধ অবগুষ্ঠিতারও বিদ্রোহধ্বজ তুলিয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাড়াইবার দিন আসিয়াছে। অস্থৰ্য্যপশু মুসলমানরমণীও বহিজগতে আপনার অধিকার লইতে অগ্রসর হইয়াছেন। তুরস্বদেশীয় মুসলমানরমণীর অভূখান এক আশ্চর্য ব্যাপার। আমরা এতদিন ইহার বিশেষ বিবরণ কিছুই জানি নাই। তুর্কিরমণীর বিষয়ে যে-সকল ইংরেজী পুস্তক আজ পর্য্যন্ত বাহির হইয়াছে তাহাতে দেখা যায়, তাহদের জীবনে স্বপ নাই, হৃদয়ে অসন্তোষের বহ্নি জলিয়াছে ; | l ৬ষ্ঠ সংখ্যা ] নিষ্ঠুর আইন ও দেশাচার বহু শতাব্দী ধরিয়া তাহাদের পায়ে যে নিগড় পরাইয়া রাখিয়াছে তাহার হাত হইতে উদ্ধার পাইবার জন্য এই অসহায় রমণীগণ এতদিন পর্য্যস্ত কেবল নিফল ষড়যন্ত্র ও ছলচাতুরীর শরণ লইয়াছে। কিন্তু উন্নতির পথ এরূপ নয়। পরিবর্তনের চেষ্টা সফল করিতে হইলে সাক্ষাংভাবে ও পরোক্ষভাবে চেষ্টা করিতে হইবে ; ভাঙ্গ ও গড় উভয়েরই প্রয়োজন । পুরাতন প্রথাকে কেবল এড়াইয়া চলিলেই হইবে না, তাহাকে পরিবর্তিত করিতে হইবে । ইহা অতি কঠিন ব্যাপার ; ইহাতে সাহস চাই, দক্ষত চাই, অধ্যবসায় চাই। তুরস্কের এই নারীসমস্তার মীমাংসা এখনও অধিক দূর অগ্রসর হয় নাই, কিন্তু তথাপি এই আন্দোলন আজকাল খুব সজীব ভাবে চলিতেছে। উদারমতাবলম্বী অনেক সংবাদপত্রে ইছার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই-সকল পত্রে স্ত্রীজাতির সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা সম্বন্ধে স্বতন্ত্র প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় এবং কোন মুসলমানরমণী নিজের সহরের কিম্বা দেশের কোনও কার্য্যে সহায়তা করিলে তাহাদের কথা বিশেষরূপে উল্লেখ করা হয়। এতদ্ব্যতীত ইস্তাস্থলে বিশেষ করিয়া রমণীদিগের জন্য "নারীজগৎ" ( The Women's World ) zfĦg qșoffa rifojtstą eta প্রকাশিত হয়। ইহা মুসলমানমহিলাগণ কর্তৃক সম্পাদিত এবং সম্পূর্ণরূপে তাহাদিগের দ্বারাই পরিচালিত। ইহার প্রবাদির মধ্যে পুনরুক্তি, অনাবশ্বক দীর্ঘত ও অপরিণত চিন্ত। প্রভৃতি কতকগুলি দোষ দেখিতে পাওয়া যায় বটে, কিন্তু পুরুষ-পরিচালিত পত্রে যে এগুলির একান্তই অভাব, তাহা ত বলা যায় না ; অধিকন্তু এই পত্রে সছুপলব্ধি ও সূক্ষ্মদৰ্শিতার ও অনেক নিদর্শন পাওয়া যায়। ইহাতে অনাথ৷ বালিকাদের জন্ত আশ্রম স্থাপনের আবশ্যকতা সম্বন্ধে আলোচনা হইয়াছে, নারী-সন্মিলনী আহবান করা হইয়াছে এবং তুরস্কের শ্রমজীবী-রমণীগণের করুণকাহিনী প্রকাশিত হইয়াছে,—এই দরিদ্র রমণীগণকে মাত্র সাত আট আন৷ পয়সার জন্য প্রত্যহ চোদঘণ্ট। পরিশ্রম করিতে হয়। তুরস্কের গবর্ণমেন্ট দুইবার এই কাগজখানি বদ্ধ করিয়া ब्रिश्८िलन, हेश्। श्३८उ३ सूक्ष बाग्न ८६ 'नाशैछभएउद्ग' * যথেষ্ট তেজ ও বীর্ষ আছে। সম্পাদিক বলেন যে, - মুসলমানদেশের নারীসমাজ কাগজখানির উদ্দেশু ভুল বুঝিয়া বন্ধ করা হইয়াছিল। তিনি সেইসঙ্গে আরও দু-একটি তীক্ষ কথা শুনাইয়া দিয়াছেন“পুরুষজাতি যদি অবাধে নারীজাতির সকলবিষয়ের সমলোচনা করিয়া যাইতে পারেন, তাহা হইলে এই মাতৃজাত পাণ্ট জবাবে কোন কথা বলিতে গেলেই তাহদের পৃষ্ঠে গুরুতর দায়িত্বের বোঝাটা যেন তুলিয়া দেওয়া না হয়। যে-সকল বিষয় আমাদের কোমলতর মনোবৃত্তিসকলের সহিতই বিশেষরূপে সংস্থষ্ট সে-সকল বিষয়ের সঙ্গত ব্যাখ্যা করিবার ও পক্ষসমর্থন করিবার পুরুষ অপেক্ষ আমাদেরই অধিক দাবী আছে । “যদি আমাদের জাতি ভবিষ্যতে সামাজিক এবং নৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধিলাভ করিতে চায় তবে এই মাতৃজাতিকেই আমাদের কন্যাদিগকে শিক্ষিত করিতে হইবে, ' এবং তাহাদের মন ও চরিত্র গঠিত করিয়া তুলিতে হইবে, কেননা তাহ হইলেই আমাদের ও তাহদের পুত্রগণ স্বদেশের প্রেম ও বিদেশের শ্রদ্ধা লাভ করিতে সমর্থ হইতে৭ পারিবে, এবং তাছু হইলেই তাহারা আমাদিগকে সম্মান করিতে এবং প্রকৃত সঙ্গিনী জ্ঞান করিয়া তাহদের কৰ্ম্ম ক্ষেত্রে আনন্দিত চিত্তে আমাদের সহায়তা গ্রহণ করিতে পরিবে ।” আর-একটি প্রবন্ধেও এই-সকল উন্নত চিন্তার পরিচয় পাওয়া যায়—”সকলেই জানেন - পারিবারিক জীবনের আদর্শ হইতে আমাদের সমাজ কতদূরে পড়িয় আছে। কত নববধূর মধুর আশা ও ভবিষ্যতের স্থখস্বপ্ন ছুদিনের মধ্যে নিৰ্দ্দয় আঘাতে ভাঙ্গিয়া গয়াছে। অচিরেই সে বুঝিয়া লইয়াছে যে এ সংসারে সে অসহায় দাসীমাত্র ; আর না হয় বড়জোর স্বামীর ক্রীড়াপুত্তলি, তাহার ভাল না লাগিলেই তিনি ফেলিয়া দিবেন। তাই সে স্বামীকে ভাল ন। বাসস্থা ভয় করিতে শিখিয়াছে, সেইসঙ্গে পরিত্যক্ত হইবার দিনটি পিছাইয়া রাখিবার জন্য অনেক কল-কৌশলও শিথিয়াছে। আমাদের গৃহে প্রকৃত প্রেম এক অজান। অতিথি। স্বামীর শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্ব আমাদের অভিজ্ঞতার বাহিরে। তবুও আমরা কেবলমাত্র নারীজাতিই যাহা করিতে পারে এমন একটি উচ্চ আকাঙ্ক্ষাকে মনে স্থান দিয়াছি ; আমরা আমাদের তুর্কিজাতিকে সংখ্যায় বাড়া