বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-সমুদ্রের দ্বীপ S80. প্ৰস্তুত হয়। ‘বাকা’ পান করিয়া অনেকে মাতলামি জুড়িয়া দিয়াছে, কেহ বা হাল্লা সুরু করিয়াছে, সম্ভবতঃ এখানে পুলিশের উৎপাত নাই। ইহাদের মধ্যে অনেক ক্রিয়োল মেয়েও আছে, তাহারা নিজেদের মধ্যে মৃদুস্বরে কথা বলিতেছে বা গান করি, তেছে বা হাসিতেছে। শ্লীলতা ও শোভনতার সীমা অতিক্রম করিতে ক্রিয়োল মেয়েদের কাচিৎ দেখিয়াছি। তবে এ কথা স্বীকার করি যে, এই মেয়েদের মধ্যে বিলাসিতার প্রাদুর্ভাব কিছু বেশী। প্ৰায় সকলকেই দেখিয়াছি অবস্থার অতিরিক্ত সাজপোষাক করে, দামী ফরাসী গন্ধদ্রব্য ব্যবহার করে। পয়সা ইহার রাখিতে জানে না, যে-কোন প্রকারে উড়াইয়া দিতে পারিলেই যেন বীচে। আমার সাদা চুণকাম-করা হোটেলের ঘরে মসিও মিকেলের সঙ্গে বসিয়া আমি নৈশভোজন সমাপ্ত করিলাম। ভোজনের প্রধান উপকরণ নানারকম সামুদ্রিক মাছ, দিশী ধরণে রান্না করা। ধরণটা ইটালী ও ফরাসী ধরণের মাঝামাঝি। নমুনা হিসাবে কিছু ‘বাকা’ পান করিয়াও দেখিলাম। আমার সম্মুখের মুক্ত বাতায়নপথে আমি দূরের ক্যাথলিক গির্জা ও তাহার দেওয়ালের গায়ের বােগেনভিলিয়া গাছের দিকে চাহিয়া ছিলাম। মসিও মিকেল বলিতেছেন, দেখুন। মিঃ পামার, এসব দ্বীপে খুব বেশী লোক আসে না। কিন্তু যারা আসে, তারা থেকেই যায় । এ জায়- * * গার একটা মোহিনী শক্তি আছে। আপনি যদি' ; চিরকাল পোর্ট ভিক্টোরিয়াতে থাকতে না চান, তবে খুব বেশীদিন এখানে থাকবেন না। আমি বলিলাম। আপনি কতদিন এখানে । আছেন ? দেখিলাম, আমার সঙ্গী একটু অতিরিক্ত বকিতে ভালবাসেন । আমার কথার বিশেষ, কোন উত্তর না দিয়া তিনি নিজের মনেই বলিয়া" । যাইতে লাগিলেন-আমি নানা যায়গায় বেড়িয়েছি মশায় । কত বড় বড় সহরে গিয়েছি, বম্বে, মোম্বাসা । তবে ইউরোপ কখনও যাইনি, সোচিলিস ; নারিকেলের শুকুনা পাতার বাড়ী। ধাবার ইচ্ছা আছে বটে। আমার এক বাল্যবন্ধু লণ্ডনে থাকেন। তিনি সাইকেল বিক্রী করেন, লোক ভাৱী ভাল । নামটা ভুলে গেলাম। তবে একদিন না একদিন তার সঙ্গে আপনার আলাপ হবেই। আমার সে বন্ধুকে সবাই 哑忙可1 a মসিও মিকেল বলিয়াই চলিলেন। দ্বীপ সম্বন্ধে নানা কথা, তাছার স্ত্রীর দুর্ব্যবহার, প্রাসলিনের বিখ্যাত জোড়া নারিকেল, সমুদ্রে ঝড়ের গল্প ইত্যাদি। প্ৰথম আমলের ফরাসী ঔপনিবেশিকরা এখানে বড় বড় নারিকেল খাগান তৈরী করিয়াছিলেন, এখন সেই সব বাগান নানা টুকরায় ভাগ হইয়া যাইতেছে। কারণ এখানে নেপোলিয়নের আমলের উত্তরাধিকার-আইন প্রচলিত। উক্ত আইন অনুসারে পরিবারের প্রত্যেকেই সম্পত্তির অংশ পায়। এই সব কথাও মসিও মিকেলের মুখে শুনিলাম। রাত্রে বিছানায় শুইয়া ঘুম হইল না। সারারাত্রি ধরিয়া সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন শুনিলাম, বড় বড় ঢেউ প্রবালিময় তটভূমিতে আছাড় খাইয়া পড়িতেছে, তাহারই শব্দ। তীরের নারিকেল বৃক্ষের শাখাপ্রশাখার মধ্যে নৈশবায়ুর