বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-সমুদ্রের দ্বীপ $8th ভিক্টোরিয়ায় হোটেল-বাড়ী, কফিখানা, মনিহারী দোকান, নারিকেল বন সব ধীরে ধীরে ঢাকিয়া ফেলিবার চেষ্টা করিতেছে। আকাশে দু’। দশটা তারা, তাহাও দেখা যায় কি যায় না। আমার মনে হইল এত চমৎকার দৃশ্য আমি আর কখনও দেখি নাই। স্বপ্নাভিভূতের মত সমুদ্রবেলায় শিলাখণ্ডে গিয়া বসিয়া বালুর উপর কঁকড়াদের খেলা দেখিতে লাগিলাম। অসংখ্য লাল কঁকড়া, প্ৰথমে মনে হইবে, যেন চেপ্টা লাল রঙের কি ফল বুঝি সমুদ্রতীর বিছাইয়া পড়িয়া আছে, মানুষের পায়ের শব্দ পাইলেই তাহারা গৰ্ত্তের মধ্যে ঢুকিয়া পড়ে, এজন্য খুব সন্তৰ্পণে পা ফেলিয়া উহাদের নিকটবৰ্ত্তী হইতে হয়। আমি সেখানে অনেকক্ষণ থাকার পরে কয়েকটি ক্রিয়োল স্ত্রীলোক সমুদ্রজলে নামিয়া মাছ ধরিতে লাগিল। গলাজলে নামিয়া সারবন্দী দাড়াইয়া ইহারা ছিপের সাহায্যে মাছ ধরে। আধা ঘণ্টার মধ্যে অনেকগুলি মাছ পাইল । প্ৰত্যেকেরই পিঠে একটা ছোট ঝুড়ি বাধা ছিল। ঝুড়িটা পূর্ণ হইতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগিল। রোজই না কি তাহারা এভাবে মাছ ধরে । ক্রিয়োল জেলেরা সহর হইতে দূরে । পাহাড়ের নীচে ছোট ছোট কুটীরে বাস । করে। তাহারা খুবই গরীব, তাহাদের ঘরে - আসবাবপত্র অতীৰ বিরল, মাত্র একটি করিয়া । টেবিল ও একখানা করিয়া শুইবার খাট । কিন্তু তাহারা অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ধাৰ্ম্মিক, দয়ালু ও খুব সরল। তাহারা ভাঙ্গা ফরাসীতে কথা বলে এবং শনিবার রাত্রে প্রায় সকলেই কিছু অতিরিক্ত মাত্রায় ‘বাকা’ পান করিয়া থাকে। " পোর্ট ভিক্টোরিয়াতে চীনাদের যে বড় দোকান আছে, সেখানে “লাকা’ বিক্রয় হয়, এক বোতলের দাম দুই সেণ্ট মাত্র। ‘ব্লাক” অত্যন্ত ঝাঁঝালো জিনিস, গলা দিয়া যতদূর গ্রাসলিন : জোড়া নারিকেল (coco de mer ) নামে, মনে হয় যেন পুড়িয়া গেল এবং তখনি গান করিবার ইচ্ছা হঠাৎ জাগিয়া উঠে। শনিবার রাত্রে সহরের সকলেই ‘বাকা’ পান করিয়া আমোদ করে । কিছুদিন এখানে থাকিবার পরে আমি সহর হইতে দূরে নির্জনে একটা বাংলো খুজিতে লাগিলাম। কিন্তু কেহই সঠিক সন্ধান দিতে পারিল না। একদিন জনসন নামে জনৈক স্থানীয় ইংরাজ অধিবাসীর সহিত আলাপ হইল। তাহাকে বাংলোর কথা জিজ্ঞাসা করিতে খুব সুন্দর ও সস্তা একটা বাংলোর সন্ধান পাইলাম। জনসন চমৎকার লোক। একদিন রাস্তায় হঠাৎ আমার কঁধ ধরিয়া বলিল, তোমার নাম সেদিন ক্লাবে ঔনলাম বটে। এখানে বেড়াতে এসেছ ! বেশ বেশ থাক। চমৎকার জায়গা । মাছ ধরার সখ আছে ? তা হ’লে একদিন এস না। আমার বাড়ীতে । দুজনে মাছ ধরা যাবে। এই ভাবেই জনসনের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ । একদিন আমি আমার নূতন বাংলোয় বসিয়া আছি, জনসন তাহার নৌকা আনিয়া হাজির ৷ এখনই মাছ