বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSr. বিচিত্র-জগৎ ধরিতে যাইতে হইবে । আমি প্ৰস্তাব করিলাম সঙ্গে সঙ্গে প্রাসলিন দ্বীপের জোড়া নারিকেল যে গাছে ফলে, সে গাছও দেখিয়া আসিতে হইবে। আমরা নৌকা ছাড়িয়া দিলাম। সিলুয়েট দ্বীপ ও মাহি পাশাপাশি অবস্থিত-ইহাদের তীরভূমির দৃশ্য ধীরে ধীরে আমাদের সম্মুখে বিস্তৃত হইল। চারিধারেই গ্রানাইটের পাহাড়, পাহাড়ের সামুদেশ সবুজ নারিকেল বনে আবৃত, মাঝে মাঝে সমুদ্রের সরু খাড়ি দ্বীপের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িয়ছে, তাহার উপরে পাহাড় ঝুকিয়া আছে, পাহাড় ও সমুদ্রের মধ্যে সেখানে চকচকে সাদা বালুময় বেলাভূমি। পাহাড়ের উপরে নারিকেল বন । প্রবাল-বাঁধের বাহিরের সমুদ্র উত্তাল তরঙ্গ-সংস্কুল। বিশাল ঢেউ আসিয়া সজোরে প্রবাল-শৈলে পড়িয়া চুৰ্ণ হইয়া যাইতেছে। ভিতরের সমুদ্র কিন্তু নদীজলের মত শান্ত, স্থির। নিকটেই একটা ছোট দ্বীপে জনসন একখানা চমৎকার বাংলোতে বাস করে। একটা অনুচ্চ পাহাড়ের উপর বাংলোতে বাস করে !! একটা অনুচ্চ পাহাড়ের উপর বাংলোটা তৈরী, সামনে ধুধু করিতেছে সুবিস্তীৰ্ণ ভারতমহাসাগর, একপাশে ঘন নারিকেল বন । একজন ক্রিয়োল ভূত্য ছাড়া জনসনের বাংলোতে আর কেউ থাকে না। সে এই নির্জন জীবনই ভালবাসে দেখিলাম। রাত্রে বাংলোর - বারান্দাতে বসিয়া জনসন আমাকে নিজের ইতিহাস বলিয়া গেল । হতাস প্রেমের কাহিনী । আর সে সভ্য জগতে ফিরিতে চায় না । এখানে বেশ আছে। এই জীবনই ভাল। এরূপ গল্প সারাজীবন অনেকের মুখে শুনিয়াছি। তবু প্রাসলিন দ্বীপের গ্রানাইট পাহাড়ের মাথার উপর উদিত চন্দ্ৰ, সম্মুখের জ্যোৎস্নালোকিত সমুদ্রািজল ও নারিকেল কুঞ্জের মধ্যে বসিয়া শুনিতে শুনিতে এ সব কাহিনী চিরনূতন ও চিররহস্যময় বলিয়া বোধ হইল । *