বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাইতুরু দ্বীপ SGS এ সময় এক রকম ফুল দ্বীপের জঙ্গলে সৰ্ব্বত্র ফুটে থাকে-মাওৱী ভাষায় তাকে বলে “পুহুটুকোয়া” অর্থাৎ ‘রাঙ্গা নক্ষত্ৰ’ ফুল। এই ফুলে খুব মধু। হাজার হাজার মৌটুসিকি পাখী ঝোপেঝাপে ‘রাঙ্গা নক্ষত্র’ ফুলের ওপর বসে মধু খাচ্ছে দেখা যাবে। ঘণ্টা-পাখী, পাদ্রী-পাখী, কাকাতুয়া প্রভৃতি অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজীল্যাণ্ডের পাখীর দল জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি এই দ্বীপে আসে এবং মে মাসের শেষ পৰ্যন্ত থাকে। ঘণ্টা-পাখী ছোট ছোট, কিন্তু দেখতে বড় সুন্দর। তার চামচিকের মত নীচু দিকে মুখ করে গাছের ডালে ঝোলে—এদের গান ঠিক যেন রূপের ঘণ্টার মত শুনতে দূর থেকে । হাইতুরু দ্বীপের কোথাও এতটুকু সমতল-ভূমি নেই-এর সবটাই উঁচু উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের ঢালু ঘন জঙ্গলে ভৰ্ত্তি, মাঝে মাঝে সঙ্কীর্ণ উপত্যকা আছে বটে, কিন্তু তাতে ফাৰ্ণগাছ ও বন্য ক্লিম্যাটস ফুলের জঙ্গল। কোন কোন উপত্যক বেয়ে পার্বত্য স্রোতস্বিনীর ধারা সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। পাহাড়ের ওপর দিকে বিশালকায় কাউরি গাছের বন, মাওৱী কাঠুরেদের তৈরী সরু পথ একেবেঁকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ওপরে চলে গিয়েছে-ওই একমাত্র পথ পাহাড়ে উঠবার । হাইতুরু দ্বীপের পাখীর দল মানুষকে ভয় করে না। যে কেউ যাক না কেন, পাখীরা নিৰ্ভয়ে তার কাছে আসে। প্রত্যেক দর্শকই কিছু না কিছু খাবার জিনিষ নিয়ে যায় পাখীদের পাওয়াবার জন্যে। এই জন্যেই বোধহয় এই সব বন্য বিহঙ্গের লোভ বেড়ে গিয়েছে। মানুষ দেখলেই গাছ থেকে নেমে তার চারিপাশে ভিড় কয়েপাবরের প্রত্যাশায় । . . . . . . এখানে যিনি গভর্ণমেণ্টের কৰ্ম্মচারী আছেন, তার স্ত্রী শীতকালে প্রতিদিন সকালে পাখীদের খাওয়ান। সে একটা অপূৰ্ব্ব স্বৰ্গীয় দৃশ্য ! ঝাঁকে ঝাঁকে বন্য পাখীর দল কোথা থেকে উড়ে এসে তার কাধে, মাথায়, হাতে, বক্সছে, চারিপাশে ভিড় করছে, পরস্পর যেন ঠেলা ঠেলি করছে—তার হাত থেকে খাবার কেড়ে খাচ্ছে-নিজের চোখে না। দেখলে সে দৃশ্যের অপূৰ্ব্বতা হৃদয়ঙ্গম করা যায় না। তারা এত নিৰ্ভয় যে একগাছ লাঠি এ সময় আড় করে ধরে থাকলে লাঠিগাছটার ওপর এক বাক পাখী এসে বসে যায়।