বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৃথিবীর বৃহত্তম নদী আমাজন SğS আসলে নদী থেকে তীরে নেমে কিছুদূর গেলেই পথিকের সে ভুল ভেঙে যাবে। খুব খোলা জঙ্গল, স্থানে স্থানে এত খোলা যে, গাছপালা কেটে পথ তৈরী করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু নিম্নভূমিতে বাঁশের জঙ্গল বেশী বলে যাতায়াতের কিছু কষ্ট হয়। যেখানে তালজাতীয় গাছের প্রাচুৰ্য্য, সেখানে টু বাকুল বলে একজাতীয় কঁাটােগাছের বন খুব ঘন। কিন্তু আমাজন জঙ্গলের যে অংশ বন্যার জলে বার মাস ডুবে থাকে, সে অংশ দিয়ে যাতায়াত করা সব সময়ই বিপজ্জনক। উচু ডাঙারু জঙ্গলে কোন বিপদ নেই, এক পথ হারিয়ে যাওয়ার বিপদ ছাড়া। জঙ্গলে পথ হারিয়ে ভুল পথে ঘোরার সম্ভাবনা খুবই বেশী। এ অবস্থায় পথভ্রান্ত পথিক ভয়ে ও দুর্ভাবনায় তারও বিবেচনা-বুদ্ধি হারিয়ে ক্রমেই গভীর থেকে গভীরতর জঙ্গলে গিয়ে পড়ে। আমাজন জঙ্গলে মানুষের খাদ্যের উপযোগী ফলমূলের নিতান্ত অভাব, তবে শিকার করে খেতে পারলে জীবজন্তুর প্রাচুৰ্য্য যথেষ্ট । জল পাওয়া কষ্টকর। মাঝে মাঝে সিপো জাতীয় মোটা মোটা বোড়া সাপের মত লতা আছে, তা কাটলে সুপেয় জল পাওয়া যায়। কিন্তু সিপো লতা কাটা যায় না হঠাৎ । তীক্ষুধার দা বা কুঠার সঙ্গে রাখা এজন্য অত্যন্ত আবশ্যক। অনেক পথভ্ৰান্ত পথিকের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়, যারা খাদ্য ও জলাভাবে মৃতপ্ৰায় অবস্থায় ইণ্ডিয়ান বা বৰ্ণশঙ্কর রবার-সংগ্ৰাহকদের দ্বারা উদ্ধার পেয়েছে। এই জঙ্গলের প্রধান গাছ ব্রোজিল বাদাম । জঙ্গলের অন্যান্য গাছপালা থেকে ব্ৰেজিল বাদামের গাছ অনেক উঁচুতে মাথা তুলে থাকে। বড় বড় গাছের গুড়ির পরিধি অনেক সময় ৪০ ফুট পৰ্য্যন্ত হয় । খুব হালকা জাতীয় কাঠ থেকে আরম্ভ করে অত্যন্ত শক্ত কাঠের জঙ্গল আছে এখানে। আমাজুন জঙ্গলের আর একটি বিশেষত্ব এই যে, এখানে বিবিধ বিষ্যতরু আছে। ইণ্ডিয়ানরা সে সব গাছ চেনে বা তীরের ফলায় তাদের বিষ মাখিয়ে জীবজন্তু শিকার করে। দরকার হলে মানুষও মারে। এই সব বিষাক্ত রসের মধ্যে একটি সুতীব্র বিষের স্পেনীয় নাম ‘মাটা কালাডো’-এর গন্ধ কিছুক্ষণ নিশ্বাসের সঙ্গে গ্ৰহণ করলে মানুষ মারা যায়। অথচ শব ব্যবচ্ছেদ করলে বিষের প্রক্রিয়ার কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। ঐ স্পেনীয় কথাটির অর্থ ‘নিঃশব্দ মৃত্যু” । অপর পক্ষে এই জঙ্গলে একটি অদ্ভুত লতাজাতীয় উদ্ভিদ আছে, অরণ্যবাসী ইণ্ডিয়ানরা একে বলে 'চুয়াসকো”। এই লতার রস নিয়মিত পান করলে মানুষের যৌবন বহুদিন পৰ্য্যন্ত অটুট থাকে। এই জাতীয় লতা অতীব দুষ্পাপ্য, কেবল মাত্ৰ ইণ্ডিয়ানরা এর সন্ধান রাখে।