বালক বিদ্যাসাগর যখন বীরসিংহ গ্রামে যাইতেন, তখন সর্ব্বাগ্রে গুরুমহাশয় কালীকান্তের বাড়ীতে গিয়া, তাঁহাকে প্রণাম করিতেন। পরে ক্রমে ক্রমে তিনি প্রত্যেক প্রতিবাসীর বাড়ী গিয়া, প্রত্যেকের তত্ত্ব লইতেন। কাহারও পীড়াদি হইলে, তিনি নির্ব্বিকারচিত্তে তাহার সেবাশুশ্রুষাদি করিতেন। এই জন্য তখন বালক বিদ্যাসাগর গ্রামবাসী কর্তৃক দয়াময় নামে অভিহিত হইতেন। তিনি তখন বিদ্যাসাগব হন নাই; কিন্তু দয়ার সাগর হইয়াছিলেন। কুকুরবিড়ালটা মরিলেও তাঁহার চক্ষে জল পড়িত। বালকের কি অসীম দয়া!
যাঁহারা বাল্য কালে তাঁহার মাননীয় ছিলেন, বয়সে তাঁহারা তাঁহার নিকট সমান সম্মান পাইতেন। তাঁহারা বিদ্যা-বুদ্ধিতে হীন হইলেও, বিদ্যাসাগর বিদ্যাভিমানে বা পদগৌরবে গর্ব্বিত হইয়া, কখনই তাদের প্রতি অসম্মান প্রকাশ করিতেন না; বরং তাঁহারা পূর্ব্বকার স্নেহভাব বিস্মৃত হইয় তাঁহার প্রতি সম্মান প্রকাশ করিলে, তিনি কুণ্ঠিত ও লজ্জিত হইতেন, বিদ্যাসাগর যখন কলেজের উচ্চ পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, তখন কলেজের তদনীন্তন কেরাণী রামধন বাবু তাঁহাকে দেখিয়া সসন্ত্রমে গাত্রোত্থান করিতেন। পাঠ্যবস্থায় বিদ্যাসাগর ইহার পরম স্নেহভাজন ছিলেন। ইহাঁকে এইরূপ সসন্ত্রমে সন্মান করিতে দেখিয়া বিদ্যাসাগর একদিন বলিয়াছিলেন,—“আমি আপনার সেই স্নেহপাত্রই আছি, আপনি অমন করিয়া আমাকে লজ্জা দিবেন না।” বিদ্যাসাগরের অমায়িকতা ও বিনয়নম্রতা দেখিয়া রামধন বাবু বিস্মিত হইয়াছিলেন।
বিদ্যাসাগরের বাল্যকালে সঙ্গ ও সাধের মধ্যে ছিল, কবির