পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
বিদ্যাসাগর।

গান শোনা। তিনি সমবয়স্ক বালকদিগকে লইয়া কবির গান করিতেন। কবির গানপ্রিয়তা-সম্বন্ধে এইরূপ একটা গল্প আছে। তিনি যখন চাকুরী করিয়া উপায়ক্ষম হন, তখন এক দিন স্বগ্রাম হইতে কলিকাতায় আসিতেছিলেন। মধ্যে তিনি এক রাত্রি এক চটিতে অবস্থান করেন। প্রাতঃকালে তিনি শুনিলেন, চটীতে এক জন অতি সুমিষ্ট-স্বরে কবির গান গাহিতেছে। তিনি উঠিয়া গিয়া সেই লোকটীর নিকট গমন করিলেন। যতক্ষণ সে গান করিতেছিল, তিনি ততক্ষশ নিঃশব্দে ও আনন্দোৎসুক হৃদয়ে গান শুনিতেছিলেন। গান থামিয়া গেলে, তিনি জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলেন, লোকটীর বাড়ী তথা হইতে ৬|৭ ছয় সাত ক্রোশ দূরে এবং তাহার নিকট কবির গান সংগৃহীত আছে। তিনি তখন তাহাকে বলিলেন,—“ভাই! আমি তোমার সঙ্গে যাইব; আমাকে তোমায় কতকগুলি গান দিতে হইবে।” লোকটি স্বীকার পাইল। পরে তিনি সেই লোকটীর বাড়ীতে গিয়া অনেক গান সংগ্রহ করিয়া আনেন। যেখানে যে কবির গান শুনিতেন, তিনি তাহা সংগ্রহ করিয়া রাখিতেন। তাহার নিকট কবির গানের একখানি প্রকাণ্ড খাতা ছিল। সখের মধ্যে এই কবির গান শোনামাত্র এবং খেলা ছিল কেবল কপাটী ও লাঠী-খেলা। এই সময় সংস্কৃত কলেজে পালোয়ান-কুস্তীর আখড়া ছিল। তিনি, গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ন প্রভৃতি সতীর্থগণ মিলিয়া কুস্তি করিতেন। তিনি অনেক সময় সমবয়স্ক বালকদিগের সঙ্গে জুটিয়া মাঠ হইতে ধান কাটিয়া আনিতেন। এই সব কথা এবং বাজার করা, রন্ধন করা প্রভৃতির কথা, বন্ধুবান্ধবদিগের নিকট অবসর-ক্রমে খুলিয়া বলিতে বিদ্যাসাগর মহাশয় কখন কুণ্ঠিত বা লজ্জিত হইতেন না।