বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙালীর অদৃষ্ট
২২৩

 পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের এত বড় প্রভাবে বাঙালী ধরা না দিয়া পারে নাই; ভারতবর্ষের অন্যান্য জাতির সহিত তুলনায় ইহাই তাহার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য, ইহাই তাহার শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্ব্বনাশের কারণ। কোনও কিছুকে কঠিন ভাবে ধরিয়া থাকিয়া নূতনের গতিরোধ করা তাহার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। এ যুগের প্রথম বাঙালী মনীষী রাজা রামমোহন রায়। পৌরুষ ও তীক্ষ্ণবুদ্ধির গুণে তাঁহার প্রতিভা ছিল অসাধারণ। তাঁহার সেই অসাধারণ মনীষায়, এই নবযুগের সমস্যা একটি অতি বাস্তব ব্যবহারিক রূপে যুক্তিসম্মত সমাধানের বিষয় হইয়া দেখা দিল। বাঙালী জাতির যে বিশিষ্ট প্রকৃতির কথা বলিয়াছি রামমোহনে তাহার ব্যতিক্রম দেখা যায়। রামমোহনের মধ্যে বাঙালীর ব্রাহ্মণ্য সংস্কার তাহার সমস্ত বাঙালিয়ানা হইতে মুক্ত হইয়া, খাঁটি আর্য্যসংস্কৃতির অভিমুখে ফিরিয়া দাঁড়াইয়াছিল। যুগের পর যুগ ধরিয়া নানা মন্ত্র ও নানা তন্ত্রের সাধনায়, ভারতীয় জাতিসমূহের, তথা বাঙালীর ধাতু-প্রকৃতি যে ছাঁচে গড়িয়া। উঠিয়াছে, রামমোহনের ব্যক্তিত্ব যেন তাহা হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তিনি যেন এই ঐতিহ্যের প্রভাব সম্পূর্ণ কাটাইয়া অতি প্রাচীন আর্য্য-মনোবৃত্তির পরিচয় দিয়াছিলেন। যে sensuous mysticism ঐতিহাসিক হিন্দুসাধনার একটি বিশিষ্ট লক্ষণ, রামমোহনে তাহার আভাস মাত্র নাই— তিনি ঘোরতর যুক্তিবাদী, Pragmatist। তাই, যে ব্রাহ্মণ্য সংস্কার বাঙালীর বহির্জীবনকে আচ্ছন্ন করিয়াছে, সেই সংস্কারের সংস্কৃতি করিয়া জ্ঞান ও যুক্তিবাদের সাহায্যে তিনি এই জাতির আত্মরক্ষার একটা পথ নির্দ্দেশ করিলেন। কিন্তু এই পথ বাঙালীর জাতি-ধর্ম্মের বিরোধী—