বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৪
বিবিধ কথা

একটা সুবিচারিত সত্যের কঠিন বন্ধনে তাহার মন কখনও ধরা দিতে পারে না। রামমোহন বাঙালীর ধর্ম্মবিশ্বাস ও সমাজব্যবস্থার অবনতির দিকটাই দেখিয়াছিলেন, এবং মনে করিয়াছিলেন, বেদ-উপনিষদের সত্যধর্ম্ম হইতে ভ্রষ্ট হইয়াই তাহার এই দশা ঘটিয়াছে। কিন্তু বাঙালী জাতির রক্তের ধর্ম্ম যাইবে কোথায়? বাঙালীর ব্রাহ্মণ্য সংস্কার একটা সংস্কার মাত্র; তাহার জাতিধর্ম্মই তাহার নিয়তি, তাহাকে সে লঙ্ঘন করিবে কেমন করিয়া? এজন্য রামমোহনের ঈপ্সিত বা ইঙ্গিতকৃত যে আদর্শ, বাঙালীর চিন্তাধারায় তাহা কতক পরিমাণে প্রভাব বিস্তার করিলেও—তাহার প্রাণমূলে শক্তিসঞ্চার করিল না। ষড়দর্শন যেমন তাহার কীর্ত্তি নহে, বেদান্ত ও উপনিষদও তেমনই তাহার মনোধর্ম্ম নহে। নব হিন্দুধর্ম্মের পুরাণ-উপপুরাণের মধ্যে সে কতকটা আত্মতৃপ্তির উপায় করিয়াছিল, তথাপি কোনও একটা তত্ত্বকে সে প্রাণ সমর্পণ করে না; সে ভাবপন্থী, জ্ঞানপন্থী নয়। রামমোহন এই পুরাণ-উপপুরাণের মূলোচ্ছেদ করিয়া হাজার বৎসরের সংস্কারকে উৎপাটন করিয়া যে প্রাচীন আর্য্যধর্ম্মকে, আধুনিক যুক্তিবাদ ও সেমিটিক ধর্ম্মবিশ্বাসের সুকঠিন একেশ্বরবাদের দ্বারা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিতে চাহিয়াছিলেন, তাহাতে ভারতের সহিত বহির্জগতের এবং পুরাকালের সহিত আধুনিক কালের একটা রফা-মীমাংসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হইয়াছিল। কিন্তু ধর্ম্ম তো একটা চিন্তাপ্রণালীর সিদ্ধান্ত নয়—উৎকৃষ্ট উপদেশ বা চরিত্র-সংগঠনী শিক্ষাই ধর্ম্মের সার মর্ম্ম নয়, যুগ প্রয়োজনই তাহার সর্ব্বস্ব নয়। ধর্ম্ম জাতির স্বভাবের অনুকূল হইয়াই তাহার প্রাণের শ্রেষ্ঠ প্রয়াসের প্রতিরূপ-হিসাবে সত্য ও সার্থক হইয়া উঠে। তাই বৌদ্ধধর্ম্ম ভারত হইতে নির্ব্বাসিত হইয়াছে; খ্রীষ্টের ধর্ম্ম আজিও য়ুরোপের ধর্ম্ম হইয়া উঠিতে পারে নাই;