বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙালীর অদৃষ্ট
২২৭

Eloquence’-কেই সেকালের সকল ভাষা ও সাহিত্যের দীক্ষামন্ত্র করিয়া তুলিয়াছিল—অনেকটা সেই ধরনের মোহে বঙ্কিমচন্দ্র সংস্কৃতহিন্দু-কাল্‌চারকেই তাঁহার স্বজাতির জন্য দাবি করিয়াছিলেন, এবং Sanskrit Eloquence-এর আদর্শে বাংলা ভাষার অপূর্ব্ব শ্রী ও শক্তি সম্পাদন করিয়াছিলেন; বাংলা সাহিত্যে নব-জীবন সঞ্চারের পক্ষে তাঁহার এই মোহই মুক্তিরূপে জ্বলিয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু তথাপি তাঁহার এই প্রতিভার মূলে ছিল তাঁহার খাঁটি বাঙালী প্রাণ। ভাল করিয়া বিশ্লেষণ করিয়া দেখিলে বুঝা যাইবে যে, বঙ্কিমের এই সাহিত্য-বিগ্রহ এক নব-সৃষ্টি; ইহার উপাদান যাহাই হউক, ইহার সৃষ্টিমূলে বাঙালীর প্রাণই স্পন্দিত হইতেছে। কারণ, এই বিগ্রহের আদর্শ ছিল ইংরেজী, কিন্তু প্রাণ-ধর্ম্মের আশ্চর্য্য মহিমায় এই বিগ্রহের মধ্যেই বাঙালীর ইষ্টমন্ত্র মূর্ত্তিধারণ করিয়াছে। নূতনকে বরণ করিয়া, আত্মসাৎ করিয়া—তাহাকে কেবল তত্ত্বের মধ্যে নয়, একটি ভাব-মূর্ত্তিতে পরিণত করিয়া—সেই নূতনকে আপনার মন্ত্রে আরতি করাই বাঙালীর বাঙালীত্বের নিদান। বঙ্কিমচন্দ্রের সমগ্র সাহিত্য-সাধনায় এই নূতনের আরতি, এই পাশ্চাত্য রস-রসিকতার আবেগ যে কাব্যসৃষ্টি করিয়াছে, এবং হিন্দুদর্শন ও হিন্দুশাস্ত্রের নূতনতর ব্যাখ্যার মূলে তাঁহার যে ভাবদৃষ্টির ইঙ্গিত রহিয়াছে, তাহাতেই নব্য বাঙালিয়ানার প্রতিষ্ঠা হইয়াছে। অথচ বঙ্কিম এ সকলই ব্রাহ্মণ্য-ধর্ম্মের নামে উৎসর্গ করিয়াছিলেন—নিজে কখনও একদিনের জন্যও ব্রাহ্মণ্য-গৌরব ত্যাগ করেন নাই। রামমোহনের প্রতিভায় বাঙালীত্ব অপেক্ষা আর্য্যসংস্কার প্রবল; বঙ্কিমের আর্য্য-সংস্কার একটা মোহ মাত্র—তাঁহার কবিত্ব ও দেশাত্মবোধের অবলম্বন; মনে প্রাণে তিনি খাঁটি বাঙালী। রামমোহন জ্ঞানপন্থী, বঙ্কিমচন্দ্র ভাবতান্ত্রিক;