বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৮
বিবিধ কথা

তাই বঙ্কিমই তাঁহার স্বজাতির অন্তরে একটা নূতন চেতনা সঞ্চার করিতে পারিয়াছিলেন।

 বাঙালীর এই Renaissance-এর দ্বিতীয় পুরোহিত স্বামী বিবেকানন্দ। বিবেকানন্দ, রামমোহন ও বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যপন্থী। বিবেকানন্দের যে তত্ত্বজিজ্ঞাসা ছিল, সে ধর্ম্মমতের জন্য নয়—বাঙালীর ভাবজীবনে শক্তি-সঞ্চারের জন্য; বিবেকানন্দও ভাবুক, তাঁহার চক্ষেও কবিস্বপ্ন। ইংরেজী দর্শন-বিজ্ঞান-ইতিহাস তাঁহাকে সংশয়বাদী করিয়াছিল; বঙ্কিমের মত ব্রাহ্মণ্য সংস্কারের মোহ তাঁহার ছিল না; তিনি প্রথম হইতেই একটা আধ্যাত্মিক সঙ্কটে বিপন্ন হইয়াছিলেন—তত্ত্ব-জিজ্ঞাসা ও সত্য-সন্ধান তাঁহাকে উদ্ভ্রান্ত করিয়াছিল। তিনি প্রথমে সম্ভবত রামমোহনের আদর্শে আকৃষ্ট হইয়াছিলেন; কিন্তু তাঁহার ভাবপ্রবণ চিত্ত তাহাতে তৃপ্ত হয় নাই। সকল বিরোধ-বৈচিত্র্যকে একটা কঠিন ঐক্যতত্ত্বের দ্বারা নিরাকৃত করার যে বিশুদ্ধ জ্ঞানবৃত্তি তাহাকে তিনি বিশ্বাস করিতে পারেন নাই; জীবনকে জীবনের দ্বারাই বুঝিবার—বিচিত্র প্রাণধর্ম্মকে বহুরূপা শক্তির লীলারূপে উপলব্ধি করার যে আশ্বাস, তাহাই তাঁহাকে প্রলুব্ধ করিয়াছিল। এই মন্ত্র-দীক্ষা তিনি পাইয়াছিলেন তাঁহার গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের নিকটে। সহস্রাধিক বৎসরের হিন্দুসাধনার সর্ব্ব বিরোধ ও বৈচিত্র্য যে বাঙালী মহাপুরুষের অলৌকিক ভাবসাধনায় এক অপরূপ সত্যরূপে উদ্ভাসিত হইয়াছিল, বিবেকানন্দের প্রাণ তাঁহার নিকটেই আত্মসমর্পণ করিল। বেদান্তের মায়াবাদ তাঁহাকে বিচলিত