বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙালীর অদৃষ্ট
২৩৩

বিবেক, আত্মপ্রত্যয় ও শক্তি-সঞ্চয়ের প্রয়োজন—সেই শিক্ষা ও সাধনার আদর্শস্থাপনের জন্যই এই সন্ন্যাস।

* * *

 বাঙালীর এই নব-জাগরণের প্রমাণ-প্রসঙ্গে আমি যে দুই মহাত্মার নাম করিয়াছি, তাঁহাদের মধ্যে আমরা উৎকৃষ্ট বাঙালী প্রতিভার বিকাশ দেখিয়াছি। বঙ্কিমের সাধনায় বাঙালীর আত্ম-পরিচয় ও আত্ম-প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ফুটিয়া উঠিয়াছে; বিবেকানন্দের প্রতিভায় বাঙালীর আত্মোন্নতি ও আত্মপ্রসারের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হইয়াছে। দুই জনেই উচ্চ ভাবের ভাবুক, সমাজের অগ্রগামী। উভয়ের সাধনাতেই একটা স্বতন্ত্র আদর্শের কল্পনা থাকিলেও, সে কল্পনায় কেবলমাত্র সংস্কার-প্রবৃত্তি বা missionary spirit-ই ছিল না; জাতির হৃদ্‌গত আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাহার প্রাণের ভুল ও অভ্যাসের মোহ—এ সকলের প্রতি তাঁহাদের একটি শ্রদ্ধা ও মমত্ব-বোধ ছিল; এক কথায় তাঁহারা জাতিরই একজন হইয়া তাহারই ভাবনার ভার লইয়াছিলেন। এইজন্যই আমরা এই দুই মহাত্মাকেই বাঙালীর এই দ্বিতীয় Renaissance-এর প্রধান প্রতিনিধিরূপে বরণ করি। ইহার আরও প্রমাণ এই যে, আধুনিক বাঙালীর প্রাণমূলে যেখানে যেটুকু সত্যকার স্পন্দন জাগিয়াছে, বাঙালীর জীবনে যেখানে সেটুকু সত্যকার রঙ ধরিয়াছে, যে সকল Idea—মস্তিষ্ক-বিলাস নয়—তাহার অন্তরের অন্তরে প্রবেশ করিয়াছে, যেখানে যেটুকু খাঁটি জাতীয় চেতনার সঞ্চার হইয়াছে, তাহার মূল অনুসন্ধান করিলে বঙ্কিম ও বিবেকানন্দের বাণীই মিলিবে। সত্য বটে, গত ২০।২৫ বৎসরের মধ্যে বঙ্কিম ও বিবেকানন্দের এই সাধনার সূত্র যেন কতকটা ছিন্ন হইয়াছে, আধুনিকতম বাঙালীর চিত্তক্ষেত্রে তাঁহাদের সেই ভাব-প্রতিমা যেন ম্লান হইয়া আসিয়াছে।