বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩২
বিবিধ কথা

সন্ধান পাইয়াছিলেন? শঙ্করের জ্ঞান ও বুদ্ধের প্রেম, এই দুই বিরোধী তত্ত্বের সমন্বয় তিনি কি এই বাঙালী মহাপুরুষের মধ্যে লক্ষ্য করিয়াছিলেন? এইরূপ সমন্বয় কি সম্ভব? কিন্তু বিবেকানন্দের নিজের মধ্যে যাহা ফুটিয়া উঠিয়াছিল, তাহাতে ঊনবিংশ শতাব্দীর মানবধর্ম্ম-সমস্যার একটা সমাধানের ইঙ্গিত রহিয়াছে। এ সমস্যা এ যুগেরই; পাশ্চাত্য জাতির অদম্য ভোগপিপাসা, সেই পিপাসার পৌরুষ, এবং সেই সঙ্গে তাহার পরিণাম-জিজ্ঞাসা হইতেই এ সমস্যার উদ্ভব হইয়াছে। বাঙালীর প্রাণে ইহার সাড়া জাগিয়াছিল, সমস্ত হৃদয় দিয়া সে ইহাকে অনুভব করিয়াছিল—পাশ্চাত্য ভাবনায় ভাবিত হইয়াই সে আপনাকেও ফিরিয়া পাইয়াছে। কারণ, এই ভোগবাদ—মনের এই স্বাধীনতা ও সংশয়ব্যাকুলতা—তাঁহার নিজের চরিত্রেও বিশেষরূপে বর্ত্তমান। তাই বিবেকানন্দ বেদান্তের যে ব্যাখ্যা করিলেন তাহাতে মায়াবাদ কর্ম্মবাদকে পুষ্ট করিল, জীবব্রহ্মের অভেদ-তত্ত্ব জীবেরই এক নূতন মহিমার প্রমাণ হইয়া দাঁড়াইল। বিবেকানন্দের চেয়ে শঙ্কর বড়—মনীষায়, বুদ্ধও বড়—তাঁহার ত্যাগে ও তপস্যায়। কিন্তু বিবেকানন্দ এই উভয় হইতেই স্বতন্ত্র, কারণ বিবেকানন্দ বাঙালী,—ভোগবাদ তাঁহার অস্থিমজ্জাগত। তিনি জীবনকে ও জগৎকে অস্বীকার করিতে পারেন নাই, সৃষ্টির এই রসমাধুর্য্য অপেয় অগ্রাহ্য মনে করা তাঁহার পক্ষে কঠিন। বরং, তাঁহার মতে, প্রকৃতিকে পুরুষের মতই ভোগ করিতে হইবে; সেই ভোগ সম্রাটের ইচ্ছার মত আত্ম-ইচ্ছার অধীন হইবে, এবং ভোগে ও ত্যাগে কোনও পার্থক্য থাকিবে না। সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের সন্ন্যাস জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের সন্ন্যাস নয়; অতিশয় বলিষ্ঠ জীবন-ধর্ম্মের জন্য যে,