বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
বিবিধ সমালোচন।

আকৃতিসৌন্দর্য্য যে বিদ্যার উদ্দেশ্য, তাহার নাম স্থাপত্য। চেতন বা উদ্ভিদের সৌন্দর্য্য যে বিদ্যার উদ্দেশ্য, তাহার নাম ভাস্কর্য্য।

 যে সৌন্দর্য্যজনিকা বিদ্যার সিদ্ধি গতির দ্বারা, তাহার নাম নৃত্য।

রব, যাহার অবলম্বন, সে বিদ্যার নাম সঙ্গীত।
বাক্য যাহার অবলম্বন, তাহার নাম কাব্য।

 কাব্য, সঙ্গীত, নৃত্য, ভাস্কর্য্য, স্থাপত্য, এবং চিত্র, এই ছয়টি সৌন্দর্য্যজনিকা বিদ্যা। ইউরোপে এই সকল বিদ্যার যে জাতিবাচক নাম প্রচলিত আছে, শ্রীমাণি বাবু তাহার অনুবাদ করিয়া “সূক্ষ্মশিল্প” নাম দিয়াছেন। নামটি আমাদের প্রীতিকর হয় নাই। যদি কালিদাস প্রেতাবস্থায় শুনিতে পান যে কুমারসম্ভব, শকুন্তলা রচনা, “শিল্প” বিদ্যা মাত্র, তবে তিনি রাগ করিবেন সন্দেহ নাই, এবং যে শিল্পবিদ্যার প্রভাবে ইলোরার প্রকাণ্ড গুহাট্টালিকা খোদিত হইয়াছিল, তাহাকে “সুক্ষ্ম” বলা একটু অসঙ্গত হয়। যাহা হউক, নামে কিছু আসিয়া যায় না।

 কাব্যের সঙ্গে, অন্যান্য “সূক্ষ্ম শিল্পের,” এত প্রকৃতিগত বিভেদ, যে এক্ষণে, অনেকেই ইহাকে আর “সূক্ষ্ম শিল্প” মধ্যে গণ্য করেন না; নৃত্য গীত, সামাজিক সামগ্রী, একা বিদ্বানের নহে, সুতরাং উহাও একটু তফাৎ হইয়া পড়িয়াছে এবং “সূক্ষ্ম শিল্প” নাম করিলে, আপাততঃ চিত্র, ভাস্কর্য, এবং স্থাপত্যই মনে পড়ে। বাবু শ্যামাচরণ শ্রীমাণির গ্রন্থের বিষয়, কেবল এই তিন বিদ্যা।

 প্রাচীন ভারতবর্ষে, এই তিন বিদ্যার কিরূপ প্রচার এবং উন্নতি ছিল, তাহার পরিচয় দেওয়াই এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য।