পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিয়ম’ ও রাজশেখর বসুর ‘চলন্তিকা অভিধান অনুসরণ করা হইয়াছে। যে কয়েকটি ক্ষেত্রে ইহার ব্যতিক্রম হইয়াছে, এখানে তাহার উল্লেখ প্রয়োজন।

 ভারতকোষে অনুসৃত বর্ণানুক্রম এইরূপ:

অ আ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ:
ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ড়
ঢ ঢ় ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম
য য় র ল শ ষ স হ

অ্যা স্বতন্ত্র স্বর হিসাবে আ-এর পরে গণ্য হইয়াছে, যেমন ‘আহোম’-এর পর ‘অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান’। কিন্তু য-ফলা+ আ-কার -এর উচ্চারণ অ্যা-র মত হইলেও উহা যথাস্থানেই বিন্যস্ত হইয়াছে, তাই ‘অগ্নিহোত্র’-এর পর ‘অগ্ন্যাশয়। এ স্বতন্ত্র বর্ণ হিসাবে পরিগণিত না হইয়া হস-যুক্ত ত’ রূপে গৃহীত হইয়াছে। বাংলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ-কারান্ত ব্যঞ্জন হসন্ত রূপে উচ্চারিত হয়, তাই স্থলনির্দেশ প্রসঙ্গে কোনও বর্ণের হসন্ত ও অ-কারান্ত রূপের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা হয় নাই; যথা ‘অকলঙ্ক’-এর পর ‘অক্ল্যাণ্ড’, ‘উৎপল বংশ’-এর পর ‘উত্তঙ্ক। বিদেশী শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে ‘ট’ বা ‘ণ্ড + ট + ড হিসাবে উল্লিখিত হয় নাই, ন+ট ন+ড রূপে গৃহীত হইয়াছে। তাই, যদিও ‘অণুবীক্ষণ’-এর পর ‘অণ্ড’– তথাপি ‘অ্যানেসথেসিয়ার পর ‘অ্যাণ্টিবায়োটিকস’ বা ‘ইনসুলিন’-এর পর ‘ইণ্টারন্যাশন্যাল কংগ্রেস অফ ওরিয়েণ্টালিস্ট স’ দেওয়া হইয়াছে।

 বাংলায় হসন্ত চিহ্নের ব্যবহার ক্রমশঃ কমিয়া আসিতেছে। বর্তমান গ্রন্থেও ভগবান, প্রাচ্যবিদ, উপনিষদ এইরূপ কতিপয় শব্দ ভিন্ন অপরাপর ক্ষেত্রে হসন্ত সচরাচর বর্জিত হইয়াছে। কিন্তু বিদেশী শব্দের ক্ষেত্রে উচ্চারণ-সৌকর্যার্থে হসন্তের ব্যবহার অপেক্ষাকৃত প্রচুর হইয়াছে। যথা, অসমোসিস’, ‘অল-বীরূনী’, ‘ভিলদাদেন’, ‘হেপটা এপি থেবাস’ ইত্যাদি। উচ্চারণ বা অর্থ -বিপর্যয়ের আশঙ্কা না থাকিলে বিদেশী শব্দের ক্ষেত্রেও শব্দের অন্তে সচরাচর হসন্ত ব্যবহার হয় নাই।

 তৎসম শব্দে সাধারণতঃ সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসৃত হইলেও স্থলবিশেষে ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া কিছু কিছু ব্যতিক্রম করা হইয়াছে। সমাসের পূর্বপদস্থিত ইন্-ভাগান্ত শব্দ পরিচিত ক্ষেত্রে ই-কারান্ত না হইয়া ‘ঈ-কারান্ত হইয়াছে, যথা ‘যোগীগণ’, ‘মন্ত্রীসভা’, ‘অনুগামীগণ ইত্যাদি। কয়েকটি ক্ষেত্রে লেখকগণের ইচ্ছানুসারে অধুনা অপ্রচলিত কিছু কিছু বানান ব্যবহার করা হইয়াছে, যথা যজ্ঞিয়, অবন্তি, অন্তরিক্ষ, বশিষ্ঠ। বেশি, বেশী’ ‘সরকারি, সরকারী প্রভৃতি অ-তৎসম শব্দে বিশেষ্য-বিশেষণ ভেদ করা হয় নাই, সর্বত্রই ‘ই’-কার ব্যবহৃত।

 বিদেশের স্থান ব্যক্তি বা গ্রন্থের নাম সাধারণতঃ ইংরেজী রূপ বা উচ্চারণ অনুসারে বাংলায় ব্যবহৃত হয়। বর্তমান ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ দেশের রীতি অনুসরণ করিবার চেষ্টা হইয়াছে। যথা আরিস্তোফানেস, উগগা, লে মিজেরাল, নেফেলায়, পারী, প্রাহা, হ্বীন, মুনখেন ইত্যাদি। স্থানের পরিচিত নামগুলি অনেক ক্ষেত্রে মূল নামের পার্শ্বে নিবিষ্ট হইয়াছে; যথা স্বীন (ভিয়েনা), মুনখেন (মিউনিখ)। গ্রন্থের নাম মূল উচ্চারণানুসারে বঙ্গাক্ষরে নির্দেশ করিয়া বন্ধনীমধ্যে আক্ষরিক বঙ্গানুবাদ দেওয়া হইয়াছে; যেমন ‘লে শাতিম (শাস্তি)’ ‘প্রোমেথেউস দেসমোতেস (বন্দী প্রমিথিউস)' এত দুকেএম (পুতুলের সংসার)।

[ ১২ ]