পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অক্সিজেন
অগস্ত্য

B. Bhattacharya, The Indian Buddhist Iconography, 2nd Edition, Calcutta, 1958.

বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

অক্সিজেন রসায়ন বিজ্ঞানের প্রভাতে জানা গিয়াছিল বায়ু মূলতঃ অক্সিজেন (১ আয়তন) ও নাইট্রোজেন ( ৪ আয়তন) গ্যাসের মিশ্রণ। ফরাসী বিজ্ঞানী লাবােয়াজিয়ে পরীক্ষা করিয়া দেখেন যে বায়ুস্থ অক্সিজেন দহনসহায়ক; অক্সিজেন না থাকিলে কোনও পদার্থ দগ্ধ হয় । অক্সিজেনের শ্বাস লইয়া প্রাণী বাঁচে। এমন কি জলচর। প্রাণী জলে দ্রবিত সামান্য পরিমাণ অক্সিজেনের শ্বাস লয়॥ লােহায় মরিচা ধরে লোহার সহিত আদ্র অক্সিজেনের ( বায়ু হইতে) রাসায়নিক ক্রিয়া হয় বলিয়া। মৃত প্রাণী ও উদ্ভিদের পচনক্রিয়াও ঘটে অক্সিজেনের স্পর্শ লাগে বলিয়া। পর্বতশৃঙ্গ আরােহণকালে শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয় বলিয়া আরােহীর। অক্সিজেনের শ্বাস লইবার জন্য অক্সিজেনপূর্ণ সিলিণ্ডার বহন করে। রােগীর শ্বাসকষ্ট হইলে অক্সিজেনের শ্বাস লইবার ব্যবস্থা করা হয়। অক্সিজেন বেশি পাইলে আগুন গনগনে হয়; কামারেরা তাই হাপর ব্যবহার করে। লােহা বা ইস্পাত কাটিবার বা দুইখণ্ড গলাইয়া পিটিয়া জুড়িবার জন্য অক্সিজেনমিশ্রিত অ্যাসিটিলিন গ্যাসের বেশি উষ্ণ শিখা ব্যবহার হয়।

আজকাল বৈজ্ঞানিক উপায়ে বায়ু তরল করিয়া উহা হইতে অক্সিজেন পৃথক করা গিয়াছে। এই ভাবে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন উৎপাদন করা হয়।

জিনিস দগ্ধ হয়, ইহার উপাদানের সহিত অক্সিজেনের রাসায়নিক সংযােগ হয় বলিয়া। কাঠ, কয়লা, কেরােসিন সকলই দাহ্য পদার্থ। কার্বন, হাইড্রোজেন প্রভৃতি ইহাদের অন্যতম উপাদান। দহনকালে অক্সিজেনযুক্ত হইয়া কার্বন হইতে কার্বনডাইঅক্সাইড ও হাইড্রোজেন হইতে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয়। প্রাণীর শ্বাসকার্যে ও কার্বনডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয়। ইহা মৃদু দহনকার্য। নাসাপথে বায়ু বা অক্সিজেন ফুসফুসে গিয়া রক্তে মিশে।

রক্তপ্রবাহের সহিত অক্সিজেনও দেহততে সঞ্চালিত হয়। প্রয়ােজনমত খাদ্যের উপাদান কার্বন, হাইড্রোজেন ইত্যাদির সঙ্গেও যুক্ত হয়। তাহাতে কার্বনডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি উৎপন্ন হয়। কার্বনডাইঅক্সাইড রক্তপ্রবাহে সঞ্চালিত হইয়া আবার ফুসফুসে ফিরিয়া আসে। সেখান হইতে নাসাপথে প্রশ্বাসের সহিত দেহ হইতে নির্গত হয়। প্রবাহপথে নদী বহিয়া চলে পচা পাতা পল্লব, প্রাণীর মৃতদেহ, স্বাস্থ্যহানিকর আবর্জনা। নদীর ধারে গড়িয়া উঠা জনপদ হইতে মলমূত্রাদি হানিকর আবর্জনা নদীতে পড়ে। জলে মিশিয়া থাকা অক্সিজেন আবর্জনার উপাদানের সহিত রাসায়নিক সংযােগে ব্যয় হইয়া যায়। তাহাতে জল দূষিত হইবার ও জলজ প্রাণীর অক্সিজেন অভাবে প্রাণহানির আশঙ্কা হয়। নদীর জলে ঢেউ উঠে। জলের বুকে সূর্যকিরণ পড়ে, বায়ু প্রবাহিত হয়। তাহাতে বায়ুস্থ অক্সিজেনের সহিত জলের ময়লার মিশিবার সুযােগ হয়। এইভাবে তরঙ্গবহুল স্রোতস্বতীর জলে জীবাণু নষ্ট হয়।

আজকাল রৌদ্র ও বায়ুর মধ্যে জলের মিহি ধারা উৎক্ষেপ করিয়া সূর্যকিরণ ও অক্সিজেনের সাহায্যে জীবাণু নাশ করিয়া পানীয় জল শােধনের ব্যবস্থা আছে। অক্সিজেন গ্রহণে প্রাণী যেমন বাঁচে তেমনই নিত্য অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসার জন্য ধীরে ধীরে ক্ষয় পায়। ইহার রাসায়নিক কার্যে অগ্নির দাহিকাশক্তি বাড়ে, খাদ্যের উপাদান দহনের ফলে দেহে শক্তি আসে, আবার ইহারই প্রভাবে ধীরে ধীরে নিঃশব্দ পদসঞ্চারে জরা উপনীত হয়, পালন ও হনন একাধারে চলে।

রামগােপাল চট্টোপাধ্যায়

অগস্ত্য মিত্রাবরুণের পুত্র বিখ্যাত মহর্ষি। কুম্ভমধ্যে জন্মিয়াছিলেন, তজ্জন্য নামান্তর কুম্ভযােনি। পত্নীর নাম লােপামুদ্রা। অগস্ত্য অনেক অসাধ্য সাধন করিয়া খ্যাতিলাভ করিয়াছিলেন। মনে হয় তিনি ঐতিহাসিক ব্যক্তি ছিলেন এবং দাক্ষিণাত্যে আৰ্যসভ্যতা বিস্তার | করিয়াছিলেন। তামিল ভাষার প্রবর্তকরূপেও তিনি প্রসিদ্ধ। তিনি দেশবাসীর বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। নানাস্থানে তাহার পূজার প্রচলন আছে। বাংলাদেশে ভাদ্রমাসের শেষ তিন দিন অগস্ত্যকে অর্ঘ্যদান করিবার ব্যবস্থা আছে। তিনি দক্ষিণদেশস্থ বিন্ধ্যপর্বতকে নতশির এবং বাতাপি ও ইল নামক দুই প্রধান অসুরকে | বধ করিয়া দাক্ষিণাত্য প্রদেশকে নিরুপদ্রব করিয়াছিলেন।

দক্ষিণদেশে যাত্রাকালে অগস্ত্য ক্রমবর্ধমান বিন্ধ্যকে বলিয়া| ছিলেন, যে পর্যন্ত আমি ফিরিয়া না আসি সে পর্যন্ত তুমি মস্তক অবনত করিয়া থাক। অগস্ত্য আর না ফেরায় বিন্ধ্য মস্তক উত্তোলিত করিতে পারেন নাই। (মহাভারত বনপর্ব, ১০৪)। সাধারণ ধারণা, অগস্ত্যযাত্রার দিন | ( মাসের প্রথম দিন) যাত্রা করিলে অগস্ত্যের মত প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নাই। তাই ঐ দিন যাত্রা করা নিষিদ্ধ। বনবাসকালে রাম অগস্ত্যাশ্রমে গমন করিলে,