পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অগ্নি
অগ্নি

রামকে অগস্ত্য বহু দৈব অস্ত্র দিয়াছিলেন (রামায়ণ, অরণ্য, ১১-৩)। রাম-রাবণের যুদ্ধকালে ইনি লঙ্কায় গিয়া। রামকে আদিত্য-হৃদয় মন্ত্র জপ করিতে উপদেশ দেন। ( রামায়ণ, যুদ্ধ, ১০৭)। অগস্ত্য-প্রদত্ত ব্ৰহ্মাস্ত্র দ্বারা রাম রাবণকে বধ করিয়াছিলেন। ( রামায়ণ, যুদ্ধ, ১১১)। শম্বুকবধের পর রাম অগস্ত্যদর্শনের জন্য অগস্ত্যাশ্রমে গেলে অগস্ত্য তাহাকে শ্বেতরাজার নিকট হইতে লব্ধ দিব্য আভরণ দান করেন ( রামায়ণ, উত্তরা, ৭৬)। দেবতাদের অনুরােধে অগস্ত্য সমুদ্রজল পান করিয়া শোষণ করিলে দেবতাগণ সমুদ্ৰান্তঃস্থিত দৈত্য বধ করেন ( মহাভারত, বন, ১০৫)।

Nilkanta Sastri, A History of South India, London, 1958.

চিন্তাহরণ চক্রবর্তী

অগ্নি আগুনের ব্যবহার অত্যন্ত পুরাতন। পিকিঙের দক্ষিণে পাঁচ লক্ষ বছর পূর্বে যে আদিমানবের অস্থি পাওয়া গিয়াছে তাহারা আগুনের সাহায্যে মাংস ঝলসাইয়া ভােজন করিত। ভারতের নানা বনবাসী জাতি বিভিন্ন উপায়ে কাঠে কাঠে ঘষিয়া আগুন করে। চকমকির ব্যবহারও আছে। আন্দামানীরা আগুনের ব্যবহার জানে, আগুন ধরাইতে জানে না। | সাইক্লপাম্পের মধ্যে চাপের ফলে উত্তাপ হয়। সেইরূপ উত্তাপের সুযােগ লইয়া বাের্নিও দ্বীপ ও ব্রহ্মের কোনও কোনও বন্যজাতি একপ্রকার দেশী পাম্পের সহায়তায় আগুন ধরায়।

নির্মলকুমার বসু


অগ্নি কোনও দাহ্যবস্তুর অক্সিজেনের সহিত দ্রুত রাসায়নিক সংযােগে যে আলােক, তাপ ও শিখার উৎপত্তি হয়, তাহাকে অগ্নি বলে। একটি বিশেষ উষ্ণতায় উন্নীত না হইলে কোনও দাহ্যবস্তু প্রজ্বলিত হয় না। বৈদ্যুতিক চুল্লীর আভা এই সংজ্ঞা অনুসারে অগ্নি নহে, কিন্তু বর্তমানে ইহাকেও অগ্নি আখ্যা দেওয়া হইতেছে। অগ্নির ব্যবহার মানবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার, যদিও তাহা কোন্ সুদূর অতীতে ঘটিয়াছিল, বলা যায় না। | অতি প্রাচীন যুগে সম্ভবতঃ পাথর টুকিয়া অগ্নি উৎপাদন করা হইত। পরবর্তী কালে হয়তাে কাঠে কাঠে ঘর্ষণ করিয়া অগ্নি উৎপাদনের প্রথা বহুল প্রচলিত হইয়াছিল। বর্তমানে সংহত সূর্যালােক, ঘর্ষণ, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক, যান্ত্রিক প্রভৃতি বহুবিধ ব্যবস্থায় অগ্নি উৎপাদন করা হইয়া থাকে। এতদ্ব্যতীত এমন কতকগুলি রাসায়নিক পদার্থ আছে, যেগুলি বাতাসের সংস্পর্শে আসিবামাত্রই জ্বলিয়া ওঠে।

সুধাংশুপ্রকাশ চৌধুরী

অগ্নি অগ্নি পৃথিবীস্থান দেবতাগণের মধ্যে সর্বপ্রধান। ঋগবেদীয় দেবতাগণের মধ্যে সূক্তসংখ্যার ভিত্তিতে বিচার করিলে ইন্দ্রের পরেই তাহার স্থান। ঋগবেদের অন্যূন ২০০ সূক্তে তিনি মুখ্যভাবে আহূত ও স্তুত হইয়াছেন। এত ব্যতিরিক্ত অন্যান্য দেবগণের সহিত অগ্নির সংস্রবও প্রায়শই লক্ষিত হইয়া থাকে। অগ্নির আকৃতি সম্পর্কে ঋগবেদে যে সকল বিশেষণ দৃষ্ট হইয়া থাকে, তন্মধ্যে নিম্নোল্লিখিত কয়েকটি বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। যথা-ঘৃত-নির্ণি’, ‘ঘৃত-কেশ’, ‘ন্ন’, ‘ধূমকেতু’, ‘তমােহন্’, ‘চিত্র-ভানু’, ‘শুক্র-শশাচি, ‘শুচিদ’, ‘কৃষ্ণ-বৰ্ত্তনি’, ‘হিরণ্য-রথ’। অগ্নির বাহনের নাম ‘রােহিং'। অগ্নির কর্ম প্রধানতঃ যজ্ঞস্থলে দেবতাদের আবাহন ও দেবগণের উদ্দেশে হবিবহন। তিনি মনুষ্য ও দেবতাগণের দূত-স্বরূপ—‘অগ্নে দূতে বিশামসি’ (ঋ১. ৩৬. ৫)। দেবগণের হবি: বহন করেন বলিয়া তাহার আর এক বিশেষণ ‘হব্য-বাটু’ বা ‘হব্য-বাহন। ঋগবেদে অগ্নিকে ‘হােতা’, ‘পুরােহিত এবং ঋত্বি’ রূপেও নির্দেশ করা হইয়াছে। অগ্নির জন্ম বা উৎপত্তি সম্পর্কেও ঋগবেদে বহুবিধ কল্পনা করা হইয়াছে। কখনও বলা হইয়াছে, মাতরিশ্বা কর্তৃক দুলােক হইতে তাহাকে আহরণ করা হইয়াছে; কখনও মেঘদ্বয়ের মধ্য হইতে ইন্দ্র-কর্তৃক তিনি উৎপাদিত হন—এইরূপ বলা হইয়াছে। কোনও কোনও মন্ত্রে দ্যাবাপৃথিবীকে হার মাতা ও পিতা রূপে বর্ণনা করা হইয়াছে। আচার্য শাকপূণির মতানুসারে পৃথিবী, অন্তরিক্ষ ও দ্যুলােক—অগ্নি এই ত্রিবিধ স্থানেই আশ্রিত ( নিরুক্ত, ৭ ২৮,: ‘পৃথিব্যাম অন্তরিক্ষে দিবীতি শাকপূণিঃ। পৃথিবীলােক, অন্তরিক্ষলােক এবং দ্যুলােকে —ইহাই আচার্য শাকপূণির মত)। নিরুক্তব্যাখ্যা দুর্গাচার্য এই ত্রি-রূপ অগ্নির বিষয়ে মন্তব্য করিয়াছেন— ‘পার্থিবােহগ্নিভূ পৃথিব্যাং যং কিঞ্চি অস্তি তদ বিক্ৰমতে তদধিতিষ্ঠতি। অন্তরিক্ষে বিদ্যুদাত্মনা। দিবি সূৰ্য্যাত্মনা।'—নিরুক্ত, ১২ ১৯। পার্থিব অগ্নিরূপে পৃথিবী লােকে যাহা কিছু আছে, তাহাতেই তিনি অধিষ্ঠান করেন। অন্তরিক্ষলােকে বিদ্যুৎরূপে এবং দুলােকে সুর্যরূপে।

( নিরুও আথিবীলেকনির মত)