বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অত্রি
অথর্ববেদ

অত্রি ব্রহ্মার মানসপুত্র। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি গােত্র প্রবর্তকগণের অন্যতম, সংহিতাকার। অথর্ববেদে ইহার প্রাধান্য দেখা যায়। কুল বা গােত্র প্রতিষ্ঠাতা অতি প্রাচীনতম ঋষিগণের সমসাময়িক বলিয়া পরিগণিত হইলেও পৌরাণিক কাল পর্যন্ত এই বংশের প্রভাকর ব্যতীত অন্য কাহারও নাম পাওয়া যায় না। পুরুবংশীয় রাজা ভদ্রাশ বা রৌদ্রাশের দশ কন্যাকে প্রভাকর বিবাহ করিয়াছিলেন এবং এই বিবাহের দশ পুত্র হইতে আত্রেয়গণের প্রতিষ্ঠা বৃদ্ধি পাইতে থাকে। পরবর্তীকালে আত্রেয়গণ অর্ণবপােতনির্মাণে বিশেষজ্ঞ বলিয়া পরিচিত হইয়াছিলেন এবং সেই কারণে ভার্গববংশীয়গণের সহিত বিরােধকালে হৈহয়-রাজ কার্তবীর্যাজুন দত্ত আত্রেয়কে তুষ্ট করিয়া আত্রেয়গণের সাহায্য গ্রহণ করিয়াছিলেন।

R. C. Majumdar. ed. The History and Culture of the Indian People-The Vedic Age, London, 1951.

অত্রি ব্রহ্মার চক্ষু হইতে উৎপন্ন, সপ্তর্ষিগণের অন্যতম। দক্ষের কন্যা অনসূয়া ইহার স্ত্রী। পুত্রলাভার্থে স্ত্রীর সহিত ইনি তপস্যা করেন। তাহাদের তপস্যায় প্রীত হইয়া বিষ্ণু দত্তাত্রেয়, শিব দুর্বাসা এবং ব্রহ্মা সােম নামক তিন পুত্র দান করেন। অন্যমতে ইনি দশপ্রজাপতির অন্যতম। বনবাসকালে রামচন্দ্র ইহার আশ্রমে কিছুদিন বাস করিয়াছিলেন। অত্রি অত্রি হইতে চন্দ্রবংশের উদ্ভব হইয়াছিল। অথবা অথর্ব শব্দটি প্রাচীন কাল হইতে ইরানে ও ভারতবর্ষে প্রায় সমান অর্থে চলিত আছে। উভয় দেশের ধর্মগ্রন্থেই অগ্নিপূজা ও পৌরােহিত্যকর্মের সহিত অথর্বার সম্পর্ক দেখা যায়। অথবা ঋষি সর্বপ্রথম অগ্নিমন্থন করেন বলিয়া ঋগবেদে উল্লেখ আছে। অথৰ্বার পুত্র দধ্যঞ্চ, ( দধীচি) অগ্নি প্রজ্বলিত করেন। বৈদিক ‘অথযু’ শব্দের অর্থ অর্চিষ্মন্ অগ্নি। অথর্বপরিবারের পুরােহিতগণ যজমানের পক্ষে প্রশস্ত বলিয়া গণ্য হইতেন। শান্তিস্বস্ত্যয়ন ও মন্ত্রৌষধি প্রয়ােগে অথবগণের খ্যাতি ছিল। অন্য দিকে জরথুস্ত্র ধর্মের অগ্নিপূজক পুরােহিতের ‘আথব’ ( বর্তমানকালে ‘অথােন।) নামে অভিহিত হইয়া থাকেন।

অথবা ঋষি অঙ্গিরার সহযােগে অথর্ববেদের সংকলন করেন। সেইজন্য অথর্ববেদীয় মন্ত্রগুলিকে প্রধানতঃ দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়— ‘আথবণ’ ও ‘আঙ্গিরস। আথবণ
মন্ত্রের বিনিয়ােগ হয় ভৈষজ্যাদি শান্ত কর্মে আর আঙ্গিরস মন্ত্রের প্রয়ােগ হয় অভিচারাদি ঘাের কর্মে।
দুর্গামােহন ভট্টাচার্য

অথর্ববেদ অথবা ঋষির নামে প্রসিদ্ধ অথর্ববেদকে আঙ্গি রস বেদ, অথর্বাঙ্গিরস বেদ এবং ভূঙ্গিরো বেদও বলা হয়। অথবা অঙ্গিরাঃ ও ভৃগু ছিলেন বেদমন্ত্রের প্রখ্যাত দ্রষ্টা এবং বিশিষ্ট সংকলয়িতা। ইহাদের নামেই চতুর্থ বেদের পরিচয়। অপর তিন বেদের পরিচয় অন্যরূপ। ঋক্, যজুঃ ও সাম— পদ্য, গদ্য ও গীতি এই ত্রিবিধ মন্ত্রের মধ্যে যেরূপ মন্ত্রের সংকলন যে বেদে অধিক, তদনুসারে সেই বেদের নামকরণ হইয়াছিল ঋগবেদ, যজুর্বেদ ও সামবেদ। চতুর্থ বেদে তিন প্রকার মন্ত্রই স্থান পাইয়াছে। সুতরাং মন্ত্রপ্রকৃতির উল্লেখ করিয়া এই বেদের স্বরূপ প্রকাশ করা সম্ভবপর হয় নাই। সেইজন্য ইহা মিন্ত্রসংকলয়িতাদের নামে পরিচিত হইয়া গিয়াছে।

নানা গ্রন্থে অথর্ববেদের বহু শাখার নাম পাওয়া যায়। পৈপ্পলাদ, তৌদ, মৌদ, শৌনক, জাজল, জলদ, ব্ৰহ্মবেদ, দেবদর্শ ও চারণবৈদ্য এই নয়টি শাখা অধিক প্রসিদ্ধ। বৈদিক চরণপর্ষদের প্রধান প্রধান ঋষিদের নাম অনুসারে একই অথর্ববেদের ভিন্ন ভিন্ন শাখার প্রবর্তন হইয়াছিল এবং বিভিন্ন শাখার মন্ত্রসংহিতা ও কল্পসূত্রের মধ্যে অল্পবিস্তর পাঠভেদ ও প্রয়ােগভেদের সৃষ্টি হইয়াছিল। অথর্ববেদের বহু শাখা কালক্রমে বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। কিন্তু নানাগ্রন্থের উক্তি ও উদ্ধৃতি উহাদের পুরাকালিক অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয়। শৌনক-শাখার মন্ত্রসংহিতা ভাষ্যসহ প্রকাশিত হইয়াছে। পৈপ্পলাদসংহিতারও মূল গ্রন্থ পাওয়া গিয়াছে। শৌনকসংহিতা এবং শৌনক-শাখার গােপথব্রাহ্মণ, বৈতানসূত্র, কৌশিকসূত্র, অথর্বপরিশিষ্ট ও পদ্ধতিগ্রন্থ হইতে শৌনকীয় অথর্ববেদের বিষয়বস্তুর বিবরণ পাওয়া যায়। মূল বিষয়ে শৌনক ও পৈপ্পলাদ শাখার লক্ষ্য অভিন্ন।

বিশকাণ্ডে বিভক্ত শৌনক সংহিতার সাতশত ত্রিশটি সূক্তে প্রায় ছয় হাজার মন্ত্র সংকলিত আছে। অন্তিম কাণ্ডের অধিকাংশ মন্ত্র ঋগবেদেও পাওয়া যায়। অপর কাণ্ডগুলিরও অনেক মন্ত্র ঋগবেদ ও যজুর্বেদের সঙ্গে এক। সমগ্র মন্ত্রসংখ্যার সাত ভাগের এক ভাগ এইরূপ। পঞ্চদশ ও যােড়শ কাণ্ড গদ্যময়। অথবমন্ত্রের প্রাচীন অনুক্রমণী পঞ্চপটলিকায় এবং অথর্বপ্রাতিশাখ্যে উনবিংশ ও বিংশ কাণ্ডের কোনও মন্ত্রের উদ্ধৃতি না থাকায় এই দুইটি কাণ্ড মূল গ্রন্থের খিল বা পরিশিষ্ট রূপে গণ্য হইয়া থাকে।
৪২