বাল্যেই পিতৃহীন হইয়া মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্তের স্নেহে বর্ধিত হন। ১৮৯০ খ্রীষ্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া কিছুকাল প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করিয়া অতুলপ্রসাদ বিলাত যান এবং ব্যারিস্টারি পাশ করিয়া দেশে প্রত্যাবৃত্ত হন। কলিকাতায় ও রংপুরে কিছুকাল আইন-ব্যবসায় করিবার পর তিনি লক্ষ্ণৌ শহর নিজ কর্মভূমি বলিয়া গ্রহণ করেন। এইখানে তিনি ক্রমশঃ শ্রেষ্ঠ ব্যবহারজীবীদের মধ্যে আসন লাভ করেন; আউধ বার অ্যাসােসিয়েশন ও আউধ বার কাউন্সিলের তিনি সভাপতি নির্বাচিত হইয়াছিলেন।
মাতামহ কালীনারায়ণ ভগবদ্ভক্ত, সুকণ্ঠ গায়ক ও সহজ ভক্তিসংগীত রচয়িতারূপে খ্যাত ছিলেন; অতুলপ্রসাদ মাতামহের এই সকল গুণের অধিকারী হইয়াছিলেনঅল্প বয়সেই তিনি যে গান রচনা করিয়াছিলেন (তােমারি যতনে তােমারি উদ্যানে) এখনও তাহা ব্রহ্মসংগীত’-ভুক্ত থাকিয়া গীত হইয়া থাকে। নানাকর্মব্যস্ত বেদনাহত জীবনে এই সংগীতরচনাই চিরদিন তাহার মনের এক প্রধান আশ্রয় ছিল। তাহার রচিত গানের সংখ্যা বহু নহে, দুইশতের কিছু অধিক; কিন্তু ইহারই সুর ও ভাব -বৈশিষ্ট্যে তিনি আধুনিক বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। পরাধীনতার বেদনায় রচিত তাঁহার গান ‘উঠ গাে ভারতলক্ষ্মী’, ‘বল বল বল সবে শতবীণাবেণুরবে, ‘হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর’ প্রভৃতির জনপ্রিয়তা স্বাধীন ভারতেও অক্ষুন্ন আছে। তাহার ভগবৎসংগীত, প্রকৃতি ও প্রেম-গাথা, সর্বত্রই যে গভীর বেদনার মধ্যেই ভক্তি ও প্রেমের আস্পদের প্রতি একান্ত আত্মনিবেদন ও নির্ভর কথার ঋজুতায় ও সুরের বৈচিত্রে মূর্ত হইয়াছে, তাহারই ফলে তাহার রচিত গান দীর্ঘকাল ধরিয়া বাঙালী শ্রোতার মর্মস্পর্শী হইয়া আছে। বাংলা কাব্যগীতির বৈশিষ্ট্য ক্ষুন্ন না করিয়াও তিনি তাহাতে হিন্দুস্থানী সংগীতের সুর ও বিশিষ্ট ঢঙের সার্থক যােজনা করিয়াছেন; বাউল ও কীর্তনের সুরের যােগসাধন করিয়া, কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাহাতে হিন্দুস্থানী ঢঙেরও সংযােজন করিয়া তিনি বাংলা গানে বৈচিত্র্যের সঞ্চার করিয়াছেন। তাহার গানগুলি গীতিগুঞ্জ' (১৯৩১ খ্র) গ্রন্থে সংকলিত হয়; তৎপূর্বে কয়েকটি গান প্রকাশিত হইয়াছিল। কাকলি’ গ্রন্থমালায় এ সকল গানের স্বরলিপি প্রকাশিত হইতেছে।
অন্তমুখী এবং ভগবৎমুখী গীতিরচয়িতা অতুলপ্রসাদ বহির্জীবনেও স্বীয় প্রতিভার চিহ্ন নানাভাবে মুদ্রিত করিয়া গিয়াছেন। গত শতাব্দীতে ও বর্তমান শতাব্দীর প্রথম ভাগে যে সকল বাঙালী বিভিন্ন প্রদেশকে নিজ কর্মভূমিদ্ৰ দিলীপকুমার রায়, অতুলপ্রসাদ ও তাহার সঙ্গীত, | প্রবাসী, ফান ১৩৩১; উত্তরা, আশ্বিন ১৩৪১ ‘অতুল সংখ্যায় প্রকাশিত প্রবন্ধাবলী; রাজ্যেশ্বর মিত্র, ‘অতুল| প্রসাদ’, ‘বাংলার গীতকার’ গ্রন্থ।