পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৩৭

হইতে নড়িবার হুকুম ছিল না, সুতরাং একটু দাঁড়াইলাম। দারোগা সেখানে গেল; আমার মনে হইল, আমার সেখানে যাওয়া উচিত। আমি দৌড়াইয়া গেলাম; আজও দুই জন ভারতবাসী আসিলেন। জিনাতাইএর মুখে জল ছিটাই দিতে, তাঁহার জ্ঞান ফিরিয়া আসিল। দারোগা আর সকলকে কাজে পাঠাইয়া দিয়া আমাকে তাঁহার পাশে বসিতে দিল। জিনাতাই সর্বাঙ্গে খুব জল ছিটাইলে পর তিনি সুস্থ বোধ করিলেন। আমি দারোগাকে জানাইলাম যে ইনি হাঁটিয়া জেলে ফিরিয়া যাইতে পারিবেন না; তখন গাড়ী আনান হইল। আমি তাঁহাকে লইয়া যাইতে আদিষ্ট হইলাম। জিনাভাইএর মাথায় জল দিতে দিতে আমার মনে হইল,—আমার কথায় বিশ্বাস রাখিয়া কত তারতবাসীই না জেল খাটতেছেন! যদি আমার পরামর্শ অন্যায় হয়, তবে কত বড় পাপী আমি! আমারই জন্য তাঁহাদিগকে এত দুঃখ সহিতে হইতেছে। এই ভাবিয়া আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলিলাম। ঈশ্বর সাক্ষী করিয়া আবার চিন্তা করিতে লাগিলাম, এবং তর্কসমুদ্রে ডুব দিয়া হাসিমুখে বাহির হইলাম। আমার মনে হইল, আমি যে পরামর্শ দিয়াছি তাহা ন্যায়সঙ্গতই বটে। দুঃখ ভোগই সুখ, দুঃখের জন্য বিরক্ত হইলে চলিবে না। এখন ত শুধু মূর্চ্ছা হইল, যদি মৃত্যুও আসে তবু আমি যে পরামর্শ দিয়াছি তাহা ছাড়া অন্য পরামর্শ দিতে পারিব না। গর্ভযন্ত্রনার চেয়ে বড় এই দুঃখ ভোগ করিয়াই শৃঙ্খল হইতে মুক্তি লাভ করা কর্তব্য। এই মনে করিয়া আমি শান্তি পাইলাম, এবং জিনাভাইকে সাহস ও ভরসা দিতে লাগিলাম।

 গাড়ী আসিলেই জিনাভাইকে তাহাতে শোয়ান হইল; গাড়ি ছাড়িয়া দিল। বড় দারোগার কাছে কথা উঠিল, তখন ছোট দারোগার চেতনা হইল। দ্বিপ্রহরে জিনাভাইকে কাজে আনা হইল না এবং আরও তিনজন