পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৪৫

হইয়া উঠিয়াছিলাম। তবু প্রাণপণে স্থির করিলাম, যাহা কিছু দুঃখ আসে তাহা সহ্য করিতেই হইবে। আমার কাছে ভগবদ‍্গীতা ছিল; পড়িলাম। সেই সময়ের উপযোগী শ্লোকগুলি পড়িয়া ও চিন্তা করিয়া আমার হৃদয় শান্ত হইল। আমার ভয়ের কারণ,—পাছে লোেকে আমাকে কাফ্রি বা চীনা, জংলী, খুনী, দুর্নীতিপরায়ণ কয়েদী বলিয়া মনে করে। তাহাদের কথা আমি বুঝিতে পারি নাই। কাফ্রিরা আমার সহিত কথা আরম্ভ করিয়া দিল, তাহাদের কথার মধ্যে বিদ্রুপের আভাস দেখিলাম। ব্যাপারটা ঠিক বোঝা গেল না, আমি কথার কোনও উত্তর দিলাম না। তাহারা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরাজীতে জিজ্ঞাসা করিল, “তোকে এখানে কেন আনা হইয়াছে?” আমি যা’ তা’ একটা উত্তর দিয়া চুপ করিলাম। একজন চীনা তখন প্রশ্ন আরম্ভ করিল, তাহা আরও খারাপ লাগিল। বিছানার সামনে আসিয়া সে আমার পানে কট‍্মট্ করিয়া তাকাইয়া থাকিল। আমি চুপ করিয়া রহিলাম; তখন সে কাফ্রিদের বিছানার দিকে গেল; সেখানে দুইজন লোক অন্য একজনের সঙ্গে ঝগড়া আরম্ভ করিয়া দিয়াছে, এবং পরস্পরের দোষ দেখাইতেছে। মনে হইতেছিল, ইহারা দুইজন খুনী বা ডাকাত। দেখিয়া শুনিয়া আমার ঘুম উড়িয়া গেল। কাল সকল কথা গবর্ণরকে জানাইব স্থির করিলাম। অনেক রাত্রে তন্দ্রা আসিল।

 ইহাই ত প্রকৃত কষ্ট; ইহার তুলনায় মোট বহা ত কিছুই নয়। আমার যে অভিজ্ঞতা হইল, অন্যান্য ভারতীয়দেরও ঐরূপ অভিজ্ঞতাই হইয়া থাকে; উহারাও এইরূপ ভয় পায়। এই কথা মনে করিয়া, আমিও ঐরূপ কষ্ট ভোগ করিয়াছি ইহা ভাবিয়া আমি খুসী হইলাম। আমি ভাবিলাম, এই অভিজ্ঞতা লইয়া আমি গবর্ণমেণ্টের সহিত আরও জোরে পড়িতে পারিব আর জেলে আসিয়া এই বিষয়ের সংস্কার করাইব। এসকল সত্যাগ্রহ সংগ্রামের গৌণ ফল। পরদিন শয্যাত্যাগ করিতেই আমাকে