পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
কারাকাহিনী।

অন্যান্য ভারতীয় কয়েদীর কাছে লইয়া যাওয়া হইল। সুতরাং গবর্নরকে এ বিষয়ে বলার অবকাশ মিলিল না। তথাপি আমার মনে এই চিন্তা হইল যে, এইরূপে ভারতবাসী ও কাফ্রি কয়েদী যাহাতে একত্র রাখা না হয় সেজন্য আন্দোলন করিতে হইবে। আমার যাওয়ার সময় জন পনের কয়েদী সেখানে ছিল—তার মধ্যে তিন জন ছাড়া আর সকলেই সত্যাগ্রহী। সে তিনজন অন্য অপরাধে অভিযুক্ত, তাহারা কাফ্রিদের সঙ্গেই থাকিত। আমি গেলে পর বড় দারোগা আদেশ দিলেন যে আমাদের সকলের জন্য পৃথক কুঠুরী দেওয়া হউক। আক্ষেপের বিষয়, দেখিলাম অনেক ভারতীয় কয়েদী কাফ্রিদের সহিত শুইতে ভালই বাসিত, কারণ সেখানে প্রহরীর দৃষ্টি এড়াইয়া তামাকটা আসটা আসিতে পারিত। আমাদের পক্ষে এটা লজ্জার কথা, কাফ্রি বা অন্য কাহাকেও ত’ ঘৃণা করি না, কিন্তু এ কথাও ভোলা যায় না যে তাহাদের ও আমাদের সাধারণ দৈনন্দিন আহারের মধ্যে মিল নাই। আবার, যাহারা তাহাদের সহিত বাস করিতে চাহিত তাহারাও স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এরূপ করিত। এরূপ কোন ভাব আমাকে কোন কাজে উদ্বুদ্ধ করিলে সে ভাব মন হইতে দূর করিয়া দেওয়াই উচিত।

 জোহান্সবর্গের জেলে আর একটি বিষয় আমাকে কষ্ট দিয়াছিল। এখানে জেলের দুইটি পৃথক্ পৃথক্ বিভাগ ছিল। একটিতে থাকিত সশ্রম দণ্ডে দণ্ডিত ভারতীয় ও কাফ্রিরা, অন্যটীতে বিনাশ্রমে দণ্ডিত কয়েদী রাখা হইত। সশ্রম দণ্ডে দণ্ডিত কয়েদীদের সেখানে যাইবার অধিকার ছিল না। আমরা দ্বিতীয় বিভাগে শুইতাম, কিন্তু সেখানকার পায়খানা ইত্যাদি ব্যবহার করিবার অধিকার আমার ছিল না। প্রথম বিভাগে কয়েদীদের সংখ্যা এত বেশী যে, সেখানে পায়খানায় যাওয়া একটু কষ্টকর ব্যাপার। অনেক ভারতবাসীই এইজন্য খুব কষ্ট পাইতেন,