পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২০৬
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


ও সাতসইকা পরগণার রাজস্বসংগ্রহের ভার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। মুশিদকুলী খাঁ অনেক জমিদারের হস্ত হইতে জমিদারী গ্রহণ করিয়া তৎসমুদায়ের রাজস্বসংগ্ৰহাৰ্থ কতকগুলি আমীন নিযুক্ত করেন। যদিও পরিশেষে তিনি ও তাহার পরবর্তী নবাবগণ


পর্যাপ্ত হইতেছে না। আমরা মেকলের বর্ণনার ঘোরতর বিরোধী হইলেও তিনি বাঙ্গালীর সম্বন্ধে যাহা চিত্র করিয়াছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীতে অনেকগুলি প্রধান প্রধান বাঙ্গালী চরিত্রে যে তাহার কিয়দংশ প্রতিফলিত হইয়াছিল, তাহা অস্বীকার করা যায় না। নন্দকুমারে যদি সে দোষ বতিয়া থাকে, তাহা হইলে অন্যান্য বাঙ্গালী বিশেষতঃ তাহার নায়ক যে অব্যাহতি পাইবেন, ইহা ঘোষসাহেব বলিতে পারেন, কিন্তু কোন নিরপেক্ষ ব্যক্তি তাহা স্বীকার করিবেন । ম্যালেসনও সত্য কথা বলিয়াছেন যে, বঙ্গের রাজধানী মুর্শিদাবাদে বহুদিন পর্যন্ত ষড়যন্ত্র চলিয়াছিল, এবং উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণও তাহা পরিচালন করিতেন। বাস্তবিক তখন বাঙ্গালীসাধারণের না হইলেও, রাজকার্যে নিযুক্ত প্রধান প্রধান বাঙ্গালীদিগের যেরূপ নৈতিক দুরবস্থা ঘটিয়াছিল, তাহাতে রাজকার্যে নিযুক্ত ব্রাহ্মণগণেরও যে অধঃপতন ঘটিয়াছিল, তাহা অস্বীকার করা যায় না। কারণ নন্দকুমারকেও ব্রাহ্মণগণের সারল্য পরিত্যাগ করিয়া কূটনীতি অবলম্বন করিতে হইয়াছিল। ইহাকে আমরা ব্রাহ্মণের পক্ষে অবনতি ব্যতীত আর কি বলিতে পারি? ঘোষসাহেব মেকলে ও ম্যালেসনের মন্তব্য নন্দকুমারের স্কন্ধে চাপাইয়া অন্যান্য বাঙ্গালীকে ও তৎসঙ্গে স্বীয় নায়ককে যেরূপ রক্ষা করিতে চেষ্টা পাইয়াছেন, তাহাও প্রকৃত ঐতিহাসিকের কার্য নহে। নবকৃষ্ণসম্বন্ধেও অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংরেজ ও বাঙ্গালীগণের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধ মত ছিল, তাহাও অবগত হওয়া যায়। নবকৃষ্ণসম্বন্ধে অপ্রীতিকর বিষয়ের উল্লেখ করার ইচ্ছা না থাকিলেও ঘোষসাহেবের উক্তির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনবোধে আমরা বার্ক প্রভৃতির বাক্য উদ্ধৃত না করিয়া কেবল এই স্থলে জনৈক নিরপেক্ষ উচ্চপদস্থ ইংরেজের মত মাত্র উদ্ধৃত করিয়া সাধারণকে দেখাইতে ইচ্ছা করিতেছি। ইংলণ্ডে হেস্টিংসের নামে ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগের যে বিচার হইযাছিল, তন্মধ্যে একটি বিষয় ছিল যে, তিনি নবকৃষ্ণের নিকট হইতে ৩ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করিয়াছিলেন। হেস্টিংস বলিয়াছিলেন যে, প্রথমে তিনি তাহা ঋণস্বরূপে গ্রহণ করেন; কিন্তু পরিশেষে দেখা যায় যে, তাহা হেস্টিংসের বা কোম্পানীর উপহারস্বরূপে পরিণত হইয়াছিল। এই বিষয়ের মন্তব্য প্রকাশচ্ছলে ইংলণ্ডের লর্ড চান্সেলার লর্ড লবরো যাহা বলিয়াছিলেন, আমরা কেবল তাহারই কিয়দংশ উদ্ধৃত করিয়া দেখাইতেছি।

 “His Lordship said, it was scarcely in the human imagination to conceive in possibility a transaction more unaccountable, more scandalous, or more unjustifiable in à Governor-General to such an individul as Nubkissen. He says his defence he wanted money, and he sent to a notorious money-lender to borrow three lacks of rupees. The man comes, brings him the three lacks, and when he is about to fill up the bonds, he desires him rather to accept the money than execute the bonds.” (Debate of the House of Lords, on the evidence delivered in the Trial of Warren Hastings Esquire, pp. 176-77)। রাজকার্যে নিযুক্ত অধিকাংশ বাঙ্গালীর অনেক পরিমাণে অবনতি ঘটিয়াছিল বলিয়াই আমরা ইংলণ্ডের উচ্চপদস্থ লোকদিগের মুখ হইতে ঐরূপ মন্তব্য শুনিতে বাধ্য হইয়াছিলাম। বাস্তবিকই তৎকালে বঙ্গদেশের পদস্থ ব্যক্তিগণের মধ্যে একটি অবনতির স্রোত