পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২০৭

জমিদারদিগের মধ্যে অনেককে নিজ নিজ জমিদারী প্রত্যর্পণ করিয়াছিলেন, তথাপি আমীনী পদের একেবারে লোপ হয় নাই। পদ্মনাভ মুশিদকুলী কিংবা তাহার পরবর্তী কোন নবাবের সময়ে উক্ত পরগণত্রয়ের আমীনী পদে প্রথম নিযুত হইয়াছিলেন, তাহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। উক্ত পরগণাত্রয় হইতে ২০ লক্ষ টাকার রাজস্ব আদায় করিতে হইত। ফতেসিংহ এক্ষণে মুর্শিদাবাদ জেলায় রহিয়াছে। কিন্তু ঘোড়াঘাট রঙ্গপুরের ও সাতসইকা বর্ধমানের অন্তর্ভূত হইয়াছে। পদ্মনাভ রাজস্বসংগ্রহকার্যের সহায়তার জন্য পুত্র নন্দকুমারকে নিজের নায়েব বা সহকারী নিযুক্ত করেন।

 রাজশ্ববিষয়ে নন্দকুমারের দক্ষতা দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে থাকায়, নবাব আলিবর্দী খাঁর রাজত্বসময়ে তিনি হিজলী ও মহিষাদলের আমীন নিযুক্ত হইয়া উক্ত পরগণালয়ের রাজস্ব সংগ্রহে প্রবৃত্ত হন। সরকারের আয় বৃদ্ধি দেখাইতে চাহিলে, জমিদার ও প্রজাদিগের সুবিধার প্রতি হস্তক্ষেপ না করিলে চলে না। নন্দকুমার সরকারের আয় বৃদ্ধি করিতে গিয়া নিজেই মহাবিপদে পতিত হইলেন আলিবর্দীর সময়ে রায়রায়ান চায়েন রায় খালসার দেওয়ানীপদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। জমিদার ও প্রজারা তাহার নিকট নন্দকুমারের নামে অভিযোগ উপস্থিত করে এবং সেই সময়ে

 প্রবাহিত হইযাছিল। সেইজন্য স্টিফেনসাহেব নন্দকুমারের প্রতি একটু উদারতা দেখাইয়া সত্য সত্যই বলিয়াছেন  “Of all the provinces of the Empire none was so degraded as Bengal and till he was nearly sixty years old Nuncomar lived the worst and most degraded part of the unhappy Province.”

 ফলতঃ তৎকালে বাঙ্গলার ন্যায় ভারত-সাম্রাজ্যের কোন প্রদেশে এরূপ নৈতিক অবনতি ঘটে নাই। নন্দকুমার সেই দেশে অবস্থিতি করার জন্য যে কূটনীতি অবলম্বন করিয়া ব্রাহ্মণজনসুলভ সারল্য পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, তাহা আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু তাহার শপক্ষ বা হেস্টিংসের জীবনী-লেখকগণ অথবা ঘোসাহেব নন্দকুমারকে যেরূপ ভাবে চিত্রিত করিয়াছেন, আমরা এক্ষণেও সাহস-সহকারে বলিতেছি যে, তাহা নন্দকুমারের প্রকৃত চরিত্র নহে। অষ্টাদশ শতাব্দীর অবনত বাঙ্গালীগণের মধ্যে অবস্থিতি করিয়া তিনি যে প্রভুভক্তি ও স্বদেশবাৎসল্য দেখাইয়াছিলেন, তাহার সহস্র দোষ থাকিলেও কেবল উক্ত দুই শ্রেষ্ঠ গুণের জন্য তাহাকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলা যাইতে পারে। যিনি ওয়াটসনের নাম জাল এবং আমীরাদের সর্বনাশ সাধন করিয়া তাহাকে উন্মত্ত করিয়া তুলিয়াছিলেন, এবং যিনি চেৎসিংহের ও অযযাধ্যার বেগমের প্রতি অত্যাচার ও দুই হস্তে উৎকোচ গ্রহণ করিয়া আপনার মহত্ত্বের পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহারা যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতৃরূপে ব্রিটিশ নরগণের নিকট গৌরবের পাত্র হইতে পারেন, তাহা হইলে স্বীয় প্রভু ও স্বদেশের কল্যাণের জন্য যিনি ইংরেজ জাতির চক্ষুশূল হইয়া আপনার জীবন বলি দিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, তাহার অন্যান্য দোষ থাকিলেও ‘তাহাকেও বাঙ্গালী জাতির গৌরবের স্থল বলিয়া জগতের সমক্ষে, প্রকাশ করা অন্যায় বলিয়া আমরা বিবেচনা করি না।