পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

অপেক্ষা ধর্মরক্ষাকে গুরুতর মনে করিলেন। পুত্র সাহেবরামও যুদ্ধে পরাজিত হইয়াছিলেন। অতঃপর তাঁহারা বীরকিটির রাজভবন হইতে বহির্গত হইয়া সপরিবারে অরণ্যে ও পর্বতময় দেশে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন।[১] যেখানে গমন করেন, সেইখানে মনে হয়, যেন নবাবসৈন্যগণ তাঁহার অনুসরণ করিতেছে এবং তাঁহাকে মুসলমানধর্মে দীক্ষিত করিতে ইচ্ছা করিতেছে। এইরূপ ভয়ানক চিন্তায় তিনি কাতর হইয়া উঠেন ও অবশেষে দেবীনগর-নামক স্থানে উপস্থিত হন। দেবীনগরেও তাঁহার এক বাসভবন ছিল। প্রবাদ ও প্রচলিত ইতিহাস অনুসারে উদয়নারায়ণ দেবীনগরে হংস-সরোবর তীরে উপস্থিত হইয়া বিষপানে প্রাণ বিসর্জন করিয়াছিলেন। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে তিনি ও সাহেবরাম বন্দী হইয়া তথা হইতে মুর্শিদাবাদে নীত হন এবং কারাযন্ত্রণা ভোগে তাঁহার অবশিষ্ট জীবনকাল পর্যবসিত হয়। দেবীনগর সাঁওতাল পরগণা জেলার অন্তর্বতী। হংস-সরোবর অদ্যাপি বর্তমান আছে।[২]

 এইরূপে উদয়নারায়ণের জীবন-অবসান হয়। তাঁহার ন্যায় উপযুক্ত জমিদার তৎকালে অতি অল্পই দৃষ্ট হইত। সর্বাপেক্ষা তাঁহার ধর্মপরায়ণতাই প্রসিদ্ধ ছিল। হিন্দু ধর্মের শ্রীবৃদ্ধিসাধনের জন্য তিনি অনেক যত্ন করিয়াছিলেন। তাঁহার প্রতিষ্ঠিত নানা স্থানের দেববিগ্রহ তাঁহার ধর্মানুরাগের সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। সাঁওতাল পরগণা জেলাস্থ বীরকিটি-নামক স্থানের রাধাগোবিন্দ, বন-নওগাঁ গ্রামস্থ গিরিধারি-মূর্তি প্রভৃতি তাঁহার প্রতিষ্ঠিত। রামপুরহাট উপবিভাগস্থ কনকপুর গ্রামে যে-অপরাজিতা মূর্তি আছেন, তিনি তাঁহার সেবা করিয়াছিলেন। তাঁহারই স্থাপিত মদনগোপাল মূর্তি মুর্শিদাবাদ বড়নগরে নাটোর-রাজগণ কর্তৃক অদ্যাপি পূজিত হইতেছেন। উদয়নারায়ণের হস্ত হইতে নবাব রাজশাহী প্রদেশ গ্রহণ করিয়া, রামজীবন ও কুমার কালুকে তাহার ভার অপণ করেন। রামজীবন নাটোর রাজবংশের আদিপুরুষ রঘুনন্দনের ভ্রাতা।

 অষ্টাদশ শতাব্দীতে আমরা আর এক উদয়নারায়ণের বিবরণ অবগত হইয়া থাকি। শেষোক্ত উদয়নারায়ণ বঙ্গজ কায়স্থ মিত্রবংশসম্ভূত; পূর্ববঙ্গের উলাইল গ্রাম তাঁহার জন্মস্থান। তিনি দৌহিত্রসূত্রে বাকলা চন্দ্রদ্বীপের রাজ্যাধিকার প্রাপ্ত হন। মিত্র উদয়নারায়ণও অত্যন্ত পরাক্রান্ত ছিলেন। তাঁহার সম্বন্ধে অনেক ঘটনা শুনিতে পাওয়া যায়। এইরূপ প্রবাদ আছে ষে, নবাব-শ্যালক খাজি মজুমদার তাঁহাকে

  1. কলিকাতা রিভিউ পত্রিকায় রাজসাহীরাজবংশের বিবরণে উদয়নারায়ণের সম্বন্ধে এইরূপ লিখিত আছে। বাঙ্গলা ১১২০ সালে রাজসাহীর জমিদার উদিতনারায়ণ নবাবের কর্মচারিগণের অত্যাচারে উৎপীড়িত হইয়া, নিজ অনুচরবর্গ সমবেত করিয়া বিদ্রোহী হন, এবং সুলতানাবাদের পর্বতে প্রস্থান করেন। নাটোর রাজবংশের আদিপুরুষ রঘুনন্দন তাঁহাকে ধৃত করিয়া আনিলে, তাহার পুরস্কারস্বরূপ তাঁহার ভ্রাতা রামজীবনকে রাজসাহীর জমিদারী প্রদান করা হয়। (Calcutta Review, 1873.
  2. মুর্শিদাবাদের ইতিহাস দেখ।