পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২৩৭

ইহার পর, কান্তবাবুকে আহবান করিয়া,তাঁহাকে বোর্ডের আদেশ অমান্য করার জন্য কিরূপ জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল, তাহা কান্তবাবু নামক প্রবন্ধে উল্লিখিত হইবে। কাউন্সিলে অপদস্থ হওয়ায়, নন্দকুমারের প্রতি হেস্টিংসের প্রতিহিংসানল এতদূর প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল যে, তিনি বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের প্রাণনাশের পর্যন্ত বাসনা করিতে লাগিলেন। অচিরাৎ তিনি অনুচরবর্গের সহিত তাহার আয়োজনে প্রবৃত্ত হইলেন।

 হেস্টিংস নন্দকুমারের প্রধান শত্রু গ্রেহামসাহেবের সহকারিতায় নন্দকুমারের অনিষ্টসাধনের পরামর্শে প্রবৃত্ত হইলেন। গঙ্গাগোবিন্দসিংহ, কান্তবাবু, নবকৃষ্ণ এবং গ্রেহামসাহেবের মুন্সী সদরউদ্দীন প্রভৃতি সকলেই সাধ্যমত হেস্টিংসের সাহায্য করিতে লাগিলেন। কমলউদ্দীন খা ঁনামে একজন শয়তান-প্রকৃতির লোক সেই সময়ে হিজলীর ইজারদারী করিত। নন্দকুমারের সহিত তাহার এবং তাহার পিতার পরিচয় ছিল। কিন্তু কমলের অসৎপ্রকৃতির জন্য নন্দকুমারের সহিত তাহার মনোবিবাদ উপস্থিত হয়। যে সময়ে হেস্টিংসের সহিত নন্দকুমারের বিবাদ চলিতেছিল, সেই সময় কমলউদ্দীন নন্দকুমারের জামাতা রাধাচরণকে লইয়া তাহার সহিত মিত্রতা করিতে উপস্থিত হয়। নন্দকুমার রাধাচরণের অনুরোধে কমলউদ্দীনের প্রতি বিদ্বেষ ভাব পরিত্যাগ করেন। নন্দকুমারের নিকট কমলউদ্দীনের উপস্থিত হইবার কারণ এই ছিল যে, গঙ্গাগোবিন্দসিংহ ও আর্চডেকিন নামে কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে উৎকোচ লওয়ার অভিযোগ করিবার জন্য, সে ফাউক নামে কোন বিশিষ্ট ইংরেজের দ্বারা কাউন্সিলে আর্জি প্রেরণ করিতে উৎসুক হয় এবং তজ্জন্য ফাউককে অনুরোধ করিবার জন্য নন্দকুমারের প্রয়োজন হইয়া উঠে। নন্দকুমার রাধাচরণের সহিত কমলউদ্দীনকে ফাউকের নিকট পাঠাইয়া দেন। ফাউক কাউন্সিলে আর্জি দাখিল করিতে সম্মত হন। ইতিমধ্যে হেস্টিংস গ্রেহামের মুন্সী সদরউদ্দীনের দ্বারা কমলউদ্দীনকে বশীভূত করিয়া নন্দকুমার, ফাউক ও রাধাচরণের নামে এক অভিযোগের সূচনা করেন।

 হেস্টিংস সুপ্রীমকোর্টে জজদিগের নিকট ১৭৭৫ খ্রীঃ অব্দের ১৯শে এপ্রিল এইরূপ লিখিয়া পাঠান যে, কমলউদ্দীন আসিয়া আমার নিকট এইরূপ প্রকাশ করে যে, নন্দকুমার ও ফাউক তাহার নিকট হইতে বলপূর্বক আমার ও বারওয়েল প্রভৃতির নামে উৎকোচ গ্রহণের এই মিথ্যা আর্জি লইয়াছে, ও গঙ্গাগোবিন্দ প্রভৃতির নামের আর্জি ফেরত চাহিলে প্রত্যর্পণ করিতেছে না। সুপ্রীমকোর্টের জজ মহোদয়েরা হেস্টিংসের পত্র পাইয়া ২৯শে এপ্রিল হইতে ইহাকে গবর্নর ও বারওয়েল প্রভৃতির নামে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ধরিয়া, প্রাথমিক অনুসন্ধানে (Preliminary inquiry) প্রবৃত্ত হইলেন।

 প্রথমে কমলউদ্দীনের অভিযোগের দরখাস্ত গ্রহণ করা হইল। কমলউদ্দীন দরখাস্তে প্রকাশ করে যে, সে গঙ্গাগোবিন্দকে ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নন্দকুমার প্রভৃতির নিকট আর্জি প্রদান করিয়াছিল; বাস্তবিক তাহার তাহা পেশ করিবার কিছুমার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু নন্দকুমারের নিকট আর্জি ফেরত চাহিলে তিনি