পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২৪৭

 আমরা এক্ষণে উভয় পক্ষের মানিত সাক্ষী কৃষ্ণজীবনসম্বন্ধে দুই চারিটি কথা বলিতে চাহি। কৃষ্ণজীবনের সাক্ষ্য প্রধানতঃ দুইটি দলিলের উপর নির্ভর করিয়াছিল। আমরা সেই দলিল দুইটির কথা সংক্ষেপে বলিয়া, সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণজীবনের সাক্ষ্যের কথারও উল্লেখ করিতেছি। কৃষ্ণজীবন সেই সময়ে মোহনপ্রসাদের অধীনতায় কার্য করিত। অনেক কথা তাহাকে যে ভয়ে ভয়ে বলিতে হইয়াছিল, এ কথা সে নিজেই স্বীকার করিয়া গিয়াছে। এই মোকর্দমায় যে-সমস্ত দলিল উপস্থাপিত করা হয়, তন্মধ্যে দুইখানি প্রধান। একখানি একটি করারনামার নকল ও আর একখানি একটি হিসাবের তালিকা। এই হিসাবের তালিকা M চিহ্নিত করা হয়। এই করারনামাও বুলাকীদাস ও মহারাজ নন্দকুমারের মধ্যে লিখিত হয়। পদ্মমোহন দাস করারনামা লিখিয়া দেয় এবং বুলাকাঁদাস তাহাতে স্বাক্ষর করেন। তাহাতে জহরতের অঙ্গীকারপত্র, দরবার-খরচ ও কতকগুলি হওীঁর কথা লিখিত থাকে। মোহনদাস নামে এক ব্যক্তি এই করারনামার নকল করিয়াছিল। সে মূল করারনামা পদ্মমোহন দাসকে দেয় এবং নকলখানি মহারাজের নিকট রাখিয়া দেয়। কৃষ্ণজীবন মূল করারনামা দেখিয়াছে বলিয়া স্বীকার করে। কৃষ্ণজীবন করারনামা দেখিয়া খাতায় সে সম্বন্ধে কতকগুলি হিসাব লিখিয়া রাখে। এই করারনামার জন্য পদ্মমোহনের সমস্ত কাগজপত্র অনুসন্ধান করা হয়। পদ্মমোহনের পিতা শিবনাথ ও ভ্রাতা লছমন দাস আপন আপন সাক্ষ্যে প্রকাশ করে যে, পদ্মমোহনের সমস্ত কাগজপত্র আদালতে দাখিল আছে। তবুও আদালত হইতে তাহ বাহির করা হয় নাই। কৃষ্ণজীবনকে সমস্ত অনুসন্ধান করিতে বলা হয়; কিন্তু কৃষ্ণজীবন সমস্ত অনুসন্ধান করিয়া উঠিতে পারে নাই। করারনামার মূল না পাওয়ায়, তাহার নকল সাক্ষ্য বলিয়া জজমহোদয়ের গ্রাহ্য করিলেন না এবং মোহনদাস যে করারনামার নকল করিয়াছিল, সে সাক্ষ্যেও বিশ্বাস করা হয় নাই। M চিহ্নিত দলিলটি মহারাজ নন্দকুমার ও বুলাকীদাসের মধ্যে একটি হিসাবের তালিকা। তাহা নাগরী ও বাঙ্গল উভয় অক্ষরে লিখিত হয়; পদ্মমোহন দাস নাগরীতে ও পুরুষোত্তম গুপ্ত বাঙ্গালায় লেখে। ইহাতেও অঙ্গীকার-পত্রের টাকা ও অন্যান্য হিসাবের উল্লেখ থাকে। কিন্তু অঙ্গীকার-পত্রানুযায়ী সমস্ত অর্থের সহিত কৃষ্ণজীবনের খাতায় লিখিত টাকার অনেক অমিল হয়। তৎকালে অনেক হিসাবপত্র আর্কট-মুদ্রায় লিখিত হইত এবং এতদ্দেশের প্রচলিত টাকার সহিত উক্ত মুদ্রার কিঞ্চিৎ পার্থক্য থাকায়, বাটানুযায়ী সময়ে সময়ে মূল্যেরও পার্থক্য হইত। সেইজন্য যে সময়ে হিসাব লিখিত হয়, খাতায় তাহার অনেক পরে সে হিসাব পুনলিখিত হওয়ায়, কিছু পার্থক্য হইবারই সম্ভাবনা। এই M চিহ্নিত হিসাবের তালিকায় মোহনপ্রসাদের স্বাক্ষর ছিল। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই সমস্ত প্রমাণসত্ত্বেও মহারাজ নন্দকুমার নিষ্কৃতি পাইলেন না! তাহাকে দোষী স্থির কবিয়া জজসাহেবেরা জুরাদিগকে চার্জ বুঝাইয়া দিলেন। আমরা পরে সে সমস্ত বিষয়ের উল্লেখ করিতেছি।

 প্রধান বিচারপতি জুরাদিগকে চার্জ বুঝাইয়া দেওয়ার পূর্বে মহারাজের কেন্সিলি