পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মলুয়া
৮১

নাকেতে বেসর নাই কানে নাই ফুল।
সর্ব্বাঙ্গ হইরাছে তোমার ধুতুরার ফুল॥
সোনায় জুড়িয়া দিব অঙ্গ যে তোমার।
কাজীরে করিয়া বাদি ঘরে যাও তার॥”

রক্তজবা আখি কন্যা কুট্টুনিরে কয়।
“কাটা ঘায়ে লুনের ছিটা আর কত সয়॥
বিদেশে গিয়াছে সোয়ামী বড় পাই তাপ।
তর মুখ দেখলে কুট্টুনি মোর বাড়ে পাপ॥
আন্ধাইরে কাটিব আমি দুঃখের দিবারাতি।
কাজীরে কহিও তার মুখে মারি লাথি॥
পরের ধান বান্যা খাই এও বড় সুখ।[১]
তর কথা শুন্যা আমি বড় পাই দুখ॥
ভিক্ষা করি খাই যদি দুয়ারে দুয়ারে।
কড়ার আশা নাহি করি দুষমন কাজীর ধারে॥
পঞ্চ ভাই আছে মোর যমের সমান।
তর যে কাটিব নাক কাজীর কাটব কাণ॥
পরানে মারিব তরে মুখ থুবরিয়া।
বাপের বাড়ী দেই আগে পত্র পাঠাইয়া॥”

বৈমুখ হইয়া বুড়ী বাড়িতে ফিরিল।
কত কষ্ট করে তবু স্বীকুরি[২] না গেল॥
সোয়ামী বিদেশে গেছে বাড়ী হইল খালি।
পাড়াপড়শির যত লোক করে বলাবলি॥

এই কথা শুনল যদি মলুয়ার মায়।
পঞ্চ ভাইয়েরে দিয়া খবর পাঠায়॥
সাজ্যা আইল পঞ্চ ভাই বাপের বাড়ী নিতে।
পঞ্চ ভাইরে দেখ্যা মলুয়া লাগিল কান্দিতে॥

11—1918 B.T
  1. পরের—সুখ=পরের ধন বানিয়া খাই, ইহাও আমার খুব সুখ।
  2. স্বীকুরি=স্বীকার