বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কমলা
১৩৩

সংসার হাদমে[১] মোর জোরা নাহি মিলে।
এই যে ফুলের মালা দেহি কার গলে॥

“পূর্বজন্ম-কথা মোর শুন দিয়া মন।
স্বর্গে তে আচিনু মোরা রতি আর মদন॥
শাপেতে পড়িয়া জন্ম মানুষের ঘরে।
মানুষের সাধ্য নাই মোরে বিয়া করে॥
দেখই আমার রূপ চান্দের কিরণ।
আমারে ভোগিতে নাই মানুষ এমন॥
সেই মনে চিন্তা করি বিরলে বসিয়া।
ধরায় থাকিব কেমনে মদনে ছাড়িয়া॥
কত বিয়ার সম্বন্ধ মোর কয় বাপ-মায়।
মনুষ্যে না হবে বিয়া না দেখি উপায়॥
বিশেষ মদন ঠাকুর কোন দিন আসে।
উত্তর কি দিব বিয়া করিলে মানুষে॥
সেই হেতু চিত্তে ক্ষমা মন কইরাছি দঢ়।
বিয়া না করিব আমি রৈব আইবুড়॥
এমন ফুলের মধু মানুষে না দিব।
মদনের ঘাটে আমি খেওয়া দিয়া খাইব॥”

এই কথা শুইন্যা তবে চিকন গোয়ালিনী।
হাসিয়। ভাঙ্গিয়া পড়ে ভাঙ্গা দেহখানি॥
তাহা দেখি কমলা যে হাসে খলখলি।
রাঙ্গা দেহ ভাঙ্গি তার চুল পড়ে এলি॥

গোয়ালিনী কয় “কন্যা শুন মোর কথা।
সত্য কহিবাম যত না হইবে অন্যথা॥
একদিন দই লইয়া যাই স্বর্গপুরে।
পন্থেতে লাগাল পাই তোমার মদনেরে॥

  1. হাদম=অ্যাডাম। যে শব্দ হইতে ‘আদমি’ শব্দ হইয়াছে, এখানে “সংসার হাদমে” অর্থ সংসারের পুরুষদের মধ্যে।