বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কমলা
১৩৫

পুষ্পবনেতে যেমন লাগিল আগুনি।
শিরে রক্ত উঠে কন্যার অন্তর বাগুনি[১]
মনের গুমর[২] কন্যা মনে লুকাইয়া।
গোয়ালিনীর কাছে কয় হাসিয়া হাসিয়া॥
“শুন শুন মনের কথা চিকন গোয়ালিনী।
আমার লাগিয়া তুমি পাইলে পেরাশনি[৩]
স্বর্গপুরী গেছ তুমি আমার লাগিয়া।
পুরস্কার দিব আমি ভাবিয়া চিন্তিয়া॥
মদন-আগুনে আমি পুড়ি রাত্রদিন।
তোমার কার্য্যেতে আমার ফিরিল সুদিন॥
তোমার মদন ঠাকুর দেখিতে কেমন।
দেখি নাই কোন দিন সে চাঁদবদন॥”

গোয়ালিনী কয় তার রূপের বাখান।
“কার্ত্তিক কুমার হেন কথায় নাই আন॥
চান্দের ছোরত[৪] তার সর্ব্ব অঙ্গে জ্বলে।
তোমায় দেইখ্যা পাগল হইছে সিনানের কালে॥
বকুলের ডালে বৈসা দেখিছে তোমায়।
তোমার লাগিয়া সদা করে হায় হায়॥
বাপের বাড়ীর চাকর তোমার হয় সে কারকুন।
একবার কহি শুন তার কত গুণ॥
নারী মজাইতে তার কত গুণ আছে।
আঁখির ইসারায় কত নারী মজিয়াছে॥
পিরীতি মজিবে ভাল পানে আর চুনে।
তাহারে ভজিলে কন্যা সুখ পাইবে মনে॥”

কন্যা বলে “গোয়ালিনী কিবা দিব আর।
মনের মত লও তুমি এই পুরস্কার॥”

  1. বাগুনি=(?)।
  2. গুমর=ক্রোধমিশ্র অভিমান।
  3. পেরাশনি=দুঃখ।
  4. ছোরত=সুরত, রূপ।