বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দস্যু কেনারামের পালা
২৩৫

শৈশবে না পাইলাম শিক্ষা না চিনিলাম পথ।
এতদিনে পাইয়া তোমায় সিদ্ধ মনোরথ॥
এসব পাপের ভরা ধরা না সহিবে।
মরিলে এ সব যদি সঙ্গে নাহি যাবে॥
পাপেতে ডুবিল দেহ আর রক্ষা নাই।
আমারে ছাড়িয়া গেলে ধর্মের দোহাই॥”

“জন্মের কামাই আমি ভাসাইব নদীর জলে।
ডুবিয়া মরিব আমি ঐ না নদীর জলে॥”
ছাপাইয়া বহে নদী হলচ্ তলচ্ পানি[১]
ভয়ে নাহি বহিয়া যায় সাউদের তরণী॥
শিষ্যগণে[২] ডাক দিয়া কহে কেনারাম।
“যথায় আছে ধনের ধড়া শীঘ্র করি আন॥”
আউরাইয়া[৩] নলের বন দস্যুগণ যায়।
বইয়া আনে যত ধন যে যেখানে পায়॥
কেনারাম বলে “ঠাকুর, দাড়াও নদীর পারে।
পাপের অর্জিত ধন ভাসাইব সায়রে॥”

এক ঘড়া দুই ঘড়া তিন ঘড়া ধন।
একে একে দেয় সব জলে বিসর্জন॥
পাপের অর্জিত ধন জলে যায় ভাসে।
তা দেখিয়া কেনারাম খলখলি হাসে॥
খাঁণ্ডা তুলিয়া কেনা ধরে নিজ মাথে।
বিদায় চাহিল কেনা গুরুর সাক্ষাতে॥
রক্তজবা আখি কেনা পাগলের প্রায়।
আপন দেহের মাংস আপনি কামড়ায়॥
“কত পাপ করিয়াছি লেখাজুখা নাই।
আমার মতন পাপী ত্রিভুবনে নাই॥
কত লোক মারিয়াছি এই খাণ্ডা দিয়া।
আপনি মরিব আজি দেখ দাড়াইয়া॥”

  1. হলচ্ তলচ্ পানি=উচ্ছ্বসিত জলরাশি।
  2. শিষ্য=অনুচর।
  3. আউরাইরা=আন্দোলন করিয়া।