বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৬
মৈমনসিংহ-গীতিকা

ঠাকুর বলেন “কেনা আর কার্য্য নাই।
স্নান কইরা আস তুমি মুক্তিমন্ত্র দেই॥
মিছা মায়া এ সংসার কেউ কার নয়।
পথিকে পথিকে যেমন পথে পরিচয়॥
টাকাকড়ি ধনজন সঙ্গে নাহি যাবে।
একাকী এসেছ তুমি একা যেতে হবে॥
মরিয়াত কার্য্য নাই শুন কেনারাম।
দীক্ষামন্ত্র আজি তোরে করিবরে দান॥
আজি হইতে তুমি মোর শিষ্য যে হইলে।
তোমারে লইয়া আমি বাড়ী যাব চলে॥
এই গান শিক্ষা কর মনসা ভাসান।
মায়ের নামেতে তুমি পাবে পরিত্রাণ॥”

এক দুই দিন যায় গুরু সঙ্গে থাকি।
কেনারাম শিখে গীত পিঞ্জিরার পাখী॥
আকাশ ছাপাইয়া গান যায় স্বগ পুরে।
মৃদঙ্গ বাজাইয়া কেনা বাড়ী বাড়ী ঘুরে॥
কক্ষেতে ভিক্ষার ঝুলি “মুক্তিভিক্ষা চাই।
এই মুষ্টি চাউল পাইলে খুসী হইয়া যাই॥”

গাইতে গাইতে কেনার চক্ষে আসে জল।
নাইচা গাইয়া ফিরে যেমন ভাবের পাগল॥
যারে দেখ্যা দেশের লোক আগে পাইত ভয়।
তাহারে ডাকিয়া লোকে গীত গাইতে কয়॥
যাহারে দেখিলে লোকের উড়িত পরাণ।
শুনিলে তাহার গান গলয়ে পাষাণ॥
শিউরি উঠিত লোক যে কেনার নামে।
পাগল হইয়া যায় সেই কেনার গানে॥
পাষাণ মানুষ হইল মহাজনের বরে।
কেনারাম গায় গীত প্রতি ঘরে ঘরে॥
কেনারাম গায় গীত ঝরে বৃক্ষের পাতা।
পয়ার প্রবন্ধে ভনে দ্বিজ বংশী-সুতা॥১—৮৯