বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কঙ্ক ও লীলা
২৯৯

দেখিলে শুনাইও আমার দুঃখের গান।
বলিয়া কহিয়া আনিয়া তারে বাঁচাও লীলার প্রাণ॥
সম্পদ-কালেতে পক্ষী পালিল তোমায়।
ভুলিতে এমন জনে কভু না জোয়ায়[১]
পৃথিবী ভ্রমিয়া পক্ষী করিও সন্ধান।
বারতা জানিয়া তাহার বাঁচাও লীলার প্রাণ॥১—১০৮

(১৮)

ষাণ্মাসিকী গীতি

"দারুণ ফাল্গুন মাস গাছে নানান ফুল।
মালঞ্চ[২] ভরিয়া ফুটে মালতী-বকুল॥
মধু-লোভে যাওরে উড়ে ভ্রমরা-ভ্রমরী।
বহু দিন নাহি শুনি বঁধুর বাঁশরী॥
নানা দেশে যাওরে ভ্রমর আর পুষ্প-মধু খাও।
কৈও কৈও লীলার কথা যদি লাগাল পাও॥
কৈও কৈও বঁধুর আগে শুন অলিকুল।
মালতীর গাছে তার ফুটিয়াছে ফুল॥

“দারুণ চৈত্রের হাওয়া দূর হইতে আসে।
আমার বঁধু এমন কালে রৈয়াছে বিদেশে॥
গাছে গাছে সোণার পাতা ফুটে সোণার ফুল।
কুঞ্জেতে গুঞ্জরী উঠে ভ্রমরার রোল[৩]
ডালে বসে কোকিল ডাকে পুষ্পেতে ভ্রমর।
এমন না কালে বঁধু গেল দেশান্তর॥
না কইয়া না বইলারে বঁধু হইলা বৈদেশী।
মালঞ্চে ফুটিয়া ফুল ঝইরা হৈল বাসী॥
বিনা সুতে হার গাঁথি মালতী-বকুলে।
প্রাণের বঁধু নাহি ঘরে দিব কার গলে॥

  1. জোয়ায়=যোগ্য হয়।
  2. মালঞ্চ=ফুল-বাগান।
  3. রোল=ময়মনসিংহের উচ্চারণ ‘রুল', সুতরাং ফুলের সঙ্গে বেশ মিলিয়া যায়।