পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

**3 যশোহর-খুলনার ইতিহাস তাহার প্রধান প্রধান সেনাপতিগণের মৃত্যু এবং বন্ধুবান্ধবের কৃতজ্ঞতার জন্ত নিতান্ত বিপন্ন ও মনঃক্ষুণ্ণ হইয় পড়িয়াছিলেন। দুদিন দেখিয়া অনেকেই তাহার প্রতি সহানুভূতিশূন্ত হইয়াছিল। বসন্তরায়ের মধুর চরিত্র তখনও লোকের স্মৃতিপথে ছিল এবং উহার নৃশংস হত্যার বার্তা তখনও কেহ ভুলিতে পারে নাই। সেই বসন্ত রায়ের প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র কচুরায়কে মোগলসৈন্তের সঙ্গে আসিতে দেখিয়া, অনেকেরই সহানুভূতি র্তাহার দিকে গিয়াছিল। কচুরায় যাহাতে পৈতৃক রাজ্য পান, শক্রমিত্ৰ সকলেরই তাহাই অভীষ্ঠিত ছিল। জ্ঞাতি-বিরোধই প্রতাপাদিত্যের পতনের কারণ হইয়াছিল। - আরও দুইএকটি ঘটনায় প্রতাপের প্রতি তাহার প্রজার শ্রদ্ধাহীন হইয়াছিল। ঘটকেরা বলিয়াছেন, মানসিংহের সঙ্গে যখন যুদ্ধ চলিতেছিল তখন একদিন প্রতাপাদিত্য সুরামন্ত অবস্থায় দু্যতক্রীড়া করিতেছিলেন; এমন সময় এক বৃদ্ধ ভিখারিণী বারংবার ভিক্ষ চাহিয়া তাহাকে বিরক্ত করিয়া তুলিল; তখন তিনি ক্রোধে আত্মহারা হইয়া বৃদ্ধার স্তনদ্বয় কৰ্ত্তন করিবার হুকুম দিলেন, সে আজ্ঞা তৎক্ষণাৎ প্রতিপালিত হইল। আবার কেহ বলেন, প্রতাপাদিত্য একদিন প্রত্যুষে মূখন মুরামত্ত অবস্থায় দরবারে আসিতেছিলেন, তখন এক মেথরাণী অনাবৃতবক্ষে সম্মার্জনী হস্তে তাহার সম্মুখে পড়িল, তিনি সেই অপছ্ত দেখিয়া উহার স্তনদ্বয় কাটিয়া ফেলিতে আদেশ দেন। নানা ভাবে রূপান্তর হইলেও মূল ঘটনাটি অসত্য বলিয়া বোধ হয় না। মোটকথা এই, তিনি লঘু পাপে একজন অসহায় বৃদ্ধ স্ত্রীলোকের স্তনদ্বয় কৰ্ত্তন করিতে হুকুম দিয়াছিলেন। মোগলদিগের বড় বড় বাদশাছের আমলে তাঙ্গাদের এইরূপ নৃশংসতার কত শত সহস্র গল্প আছে, কত পাঠক ভিন্সেণ্ট স্মিথ প্রভৃতি ঐতিহাসিকের গ্রন্থ পড়িতে গিয়া রোমাঞ্চিত হইয়া থাকেন। কিন্তু তাই বলিয়া হিন্দুরাজা প্রতাপের পাপকে কোন মতে লঘু বলিয়৷ মনে করা যায় না। হিন্দুর শাস্ত্রে স্ত্রীলোকের অবমাননা বা তৎপ্রতি নৃশংসতার মত পাপ আর নাই। হিন্দুর নিকট স্ত্রীলোকমাত্রেই বিশ্বজননীর অংশভূত ; উছার প্রতি অত্যাচার হইলেই প্রকৃত ধৰ্ম্মশ্লানি হয়, উছার জন্ত ভগবতী কখনও ক্ষমা করেন না। তিনি সেরূপ অত্যাচারীকে যুগে যুগে ভীষণ শাস্তি দিবার জন্য স্বয়ং আবিভূত হইয়াছেন। রাবণ বা শুম্ভনিশুম্ভ ইহার দৃষ্টান্তস্থল। সুতরাং হিন্দুর চক্ষে প্রতাপ ক্ষমাহ মহেন।