পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : পুরুষ-যজ্ঞ ァe ভক্ষণ করা হইতেছে। স্পষ্টই বলা হইতেছে—“সোমং রাজানম ইহ ভক্ষয়ামি।” এখন আপনারা খ্ৰীষ্টানেরা দেবতা ভক্ষণের সহিত বেদপন্থীর দেবতা ভক্ষণের তুলনা করুন | খ্ৰীষ্টানের খ্ৰীষ্ট ত অনাদি নিত্য বাগ দেবতা। সোমের সহিত বাগ দেবতার সম্পর্ক কি ? আমার সঙ্গে আম্বন ; চমকাইবেন না । আমাদের বেদসাহিত্যে সোমের সহিত বাগ দেবতার সম্পর্ক পুর্বেই আপনাদিগকে জানাইয়াছি। বাগ দেবতাই সোম আনিয়াছিলেন । ঋগ্বেদসংহিতার মধ্যে নানা স্থানে সোম আহরণের আখ্যায়িকা আছে । কোন পার্থী দেবতাদের জন্য সোম আনিয়াছিল ; সেই পার্থীকে শুেন বা স্বপর্ণ বলা হইতেছে। কোথাও বলা হইতেছে, তেনের পুত্র স্বপণ দূরদেশ হইতে সোম আনিয়াছেন। কোথাও বলা হইতেছে, তাক্ষ্য পক্ষী সোম আনিয়াছেন । ঐতরেয় ব্রাহ্মণ বলিতেছেন, গায়ত্রী স্বপণী হইয়া সোম আনিয়াছেন ; তাক্ষ অগ্রণী হইয়া তাহাকে পথ দেখাইয়াছিলেন। বেদের এই তাক্ষ্য পুরাণের গরুড় । ঐতরেয় ব্রাহ্মণের অন্যত্র বলা হইতেছে, দেবতারা সোম আনিবার জন্য বেদের ছন্দ গুলিকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন । এই ছন্দেরাই পাখী বা সুপর্ণ সাজিয়া সোম আনিতে উপরে উঠিলেন। প্রথমে জগত উঠিলেন, পরে ত্রিভুপ, উঠিলেন ; তাহারা ক্লাস্ত হইয়া পড়িলে শেষে গায়ত্রী উঠিলেন। সোম গন্ধৰ্ব্বদের মধ্যে ছিলেন। কুশানু নামক গন্ধৰ্ব্বের বাণে ক্ষতবিক্ষত হইয়াও গায়ত্রীরূপ। সপণী দুই পা এবং মুখ দিয়া সোমকে চাপিয়া ধরিয়া লইয়া আসিলেন। অতএব যে পার্থী সোম আনিলেন, তিনি গায়িত্ৰী ; আর কেহ নহেন । এই গায়ত্রী কিন্তু ছন্দের মধ্যে প্রধান ; তিনি ছন্দসাং মাতা । এই অর্থে তিনি বেদবাক্যের প্রধান, স্বয়ং বাগ দেবতা। সোম ক্রয় উপলক্ষে ঐতরেয় ব্রাহ্মণ বলিতেছেন, রাজা সোম গন্ধৰ্ব্বদের নিকট ছিলেন। বাগ দেবী দেবগণকে বলিলেন, গন্ধৰ্ব্বের স্বীপ্রিয়, আমাকেই তোমরা পাঠাও, আমি গন্ধৰ্ব্বদিগকে ভুলাইয়া সোম আনিব। এই বলিয়া বাগ দেবী নগ্ন কুমারীরূপে সোম আনিতে গেলেন এবং গন্ধৰ্বদিগকে বঞ্চনা করিয়া সোম লইয়া আসিলেন । এই ঘটনার অভিনয়ে সোমাযজ্ঞে একটি ছোট গাভী দিয়া সোম ক্রয় করা হইত। সেই গাভীটি বাগ দেবীর স্থানীয়। মনে রাখিবেন, ‘গে’ শব্দের একটা অর্থ ‘বাক্য’ বাক’ । সোমাহরণ সম্বন্ধে কতকগুলি উপাখ্যান পাইলেন । তৈত্তিরীয় সংহিতা এই কয়েকটি উপাখ্যানকে মিলাইয়া দিয়াছেন । তৈত্তিরীয় সংহিতা বলিতেছেন, কন্দ্র এবং স্বপণী পরস্পর স্পৰ্দ্ধ করিতেন। বেদের এই কুপর্ণ পুরাণে বিনতা হইয়াছেন। এই বিনতারই পুত্র গরুড় । কন্দ্রর জয় হইয়াছিল। স্বপণী তাহার দাসী হইয়াছিলেন। কন্দ্র বলিলেন, তৃতীয় দ্ব্যলোকে যে সোম আছেন, র্তাহাকে যদি আনিতে পার, তাহা হইলে তোমার দাসীত্ব মোচন করিব। বেদের ছন্দগুলি এই স্বপণীর সস্তান। মায়ের আদেশে ছন্দেরা সোম আনিতে উঠিল ; জগতী পারিল না, টুিপ ও পারিল না, কনিষ্ঠ গায়ত্রী সমর্থ হইলেন। দুই পা এবং মুখ দিয়া চাপিয়া ধরিয়া সোমকে নামাইয়া আনিলেন। পথিমধ্যে গন্ধৰ্ব্ব বিশ্বাবস্থ সোমকে আটকাইলেন। তখন দেবতারা বাগ দেবীকে পাঠাইলেন। বাগ দেবী গন্ধৰ্ব্ব দিগকে ভুলাইয়া সোম আনি