পাতা:শকুন্তলা (ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর).djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
শকুন্তলা

করিয়া তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইল; এবং জিজ্ঞাসিল মা! ও কে, ওকে দেখিয়া তুই কাঁদিস্ কেন। তখন শকুন্তলা গদগদ বচনে কহিলেন বাছা! ও কথা আমাকে জিজ্ঞাসা কর কেন; আপন অদৃষ্টকে জিজ্ঞাসা কর।

 কিয়ৎক্ষণ পরে রাজা মনের আবেগ সংবরণ করিয়া শকুন্তলাকে কহিলেন প্রিয়ে! আমি তোমার প্রতি যে অসদ্ব্যবহার করিয়াছি তাহা বলিবার নয়। তৎকালে আমার মতিচ্ছন্ন ঘটিয়াছিল তাহাতেই অবমাননা করিয়া বিদায় করিয়াছিলাম। কয়েক দিবস পরেই আমার সকল বৃত্তান্ত স্মরণ হইয়াছিল। তদবধি আমি কি অসুখে কাল যাপন করিয়াছি তাহা আমার অন্তরাত্মাই জানেন। আমি পুনর্ব্বার তোমার দর্শন পাইব আমার সে আশা ছিল না। আজি আমার কি সৌভাগ্যের দিবস বলিতে পারি। এক্ষণে তুমি প্রত্যাখ্যানদুঃখ পরিত্যাগ করিয়া আমার অপরাধ মার্জনা কর।

 এই বলিয়া উম্মূলিত তরুর ন্যায় ভূতলে পতিত হইলেন। তদ্দর্শনে শকুন্তলা অন্তে ব্যন্তে রাজার হস্তে ধরিয়া কহিলেন আর্যপুত্র! উঠ, উঠ। তোমার দোষ কি; আমার অদৃষ্টের দোষ। এত দিনের পরে দুঃখিনীকে যে স্মরণ করিয়াছ তাহাতেই আমার সকল দুঃখ দূর হইল।