পাতা:সাধনা (প্রথম বর্ষ, প্রথম ভাগ).pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্যাগ । প্রথম পরিচ্ছেদ । ফাল্গুনের প্রথম পূর্ণিমায় আম্রমুকুলের গন্ধ লইয়া নব বসন্তের বাতাস বহিতেছে । পুষ্করিণীতীরের একটি পুরাতন লিচু গাছের ঘন পল্লবের মধ্য হইতে একটি নিদ্রাহীন অশ্রান্ত পাপিয়ার গান মুখুয্যেদের বাড়ির একটি নিদ্রাহীন শয়নগৃহের মধ্যে গিয়। প্রবেশ করিতেছে। হেমন্ত কিছু চঞ্চল ভাবে কখন তার স্ত্রীর এক গুচ্ছ চুল খোপা হইতে বিশ্লিষ্ট করিয়া লইয়া আঙুলে জড়াইতেছে, কখন তাহার বালাতে চুড়িতে সংঘাত করিয়া ঠুং ঠুং শব্দ করিতেছে, কথন তাহার মাথার ফুলের মালাটা টানিয়া স্বস্থানচ্যুত করিয়া তাহার মুখের উপর আনিয়া ফেলিতেছে। সন্ধ্যাবেলাকার নিস্তব্ধ ফুলের গাছটিকে সচেতন করিয়া তুলিবার জন্য বাতাস যেমন একবার এপাশ হইতে একবার ওপাশ হইতে একটু আধটু নাড়াচাড়া করিতে থাকে, হেমন্তের কতকটা সেই ভাব । কিন্তু কুসুম সম্মুখের চন্দ্রালোকপ্লাবিত অসীম শূন্যের মধ্যে দুই নেত্রকে নিমগ্ন করিয়া দিয়া স্থির হইয়া বসিয়া আছে । স্বামীর চাঞ্চল্য তাহাকে স্পর্শ করিয়া প্রতিহত হইয়া ফিরিয়া যাইতেছে। অবশেষে হেমন্ত কিছু অধীর ভাবে কুসুমের দুই হাত নাড়া দিয়া বলিল “কুসুম তুমি আছ কোথায় ! তোমাকে যেন একটা মস্ত দুরবীণ কষিয়া বিস্তর ঠাহর করিয়া বিন্দুমাত্র দেখা যাইবে এমনি দূরে গিয়া পড়িয়াছ। আমার ইচ্ছ, তুমি আজ একটু কাছাকাছি এস। দেখ দেখি কেমন চমৎকার রাত্রি !"