পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৪৮ শ্যামা । বেলা হবে কেন, তোমার জন্যে সজিদেব বসে আছে ? সরলা সয্যের দিকে তাকাইয়া দেখিলেন, যথার্থই অধিক বেলা হইয়াছে, তখন ব্যস্তসমস্ত হইয়া ছাত হইতে নামিয়া রান্না চড়াইয়া দিলেন । পাকশাক হইল । গোপাল খাইল, সরলার ভাতের কাছে বসা মাত্র । শ্যামা আবার বাসন, ঘর মন্ত করিল। সে দিন গেল, তার পরদিনও গেল । সরলার বিরহানল ক্ৰমে ক্ৰমে কম পড়িয়া আসিতে লাগিল । একেবারে যে নিৰবণি হইয়া গেল, তা নয়। কিন্তু সে পাবকের শিখা আর রহিল না । সময় কি চমৎকার চিকিৎসক । শোক তাপ যদি চিরকালই সমান থাকিত, তাহা হইলে মানবজীবন কি দুঃসহ দুঃখভার হইয়া পড়িত ! বিধভষেণ ও শশিভষেণের পথক হইবার দিনকতক পরেই গদাধরচন্দ্রের দল আসিয়া উপস্থিত হয় । বিধভাষণ যত দিন বাটীতে ছিলেন, গদাধরচন্দ্র অথবা তাহার জননী সরলার সহিত বাক্যালাপ করেন নাই, কিবা তাঁহার প্রতি কোন অত্যাচার করিতেও সাহস পান নাই । প্রমদা মাঝে মাঝে বাক্যবাণ বষণ করিতেন বটে, কিন্ত; সরলা তাহা শনিয়াও শুনিতেন না। কিন্তু এক্ষণে তিন জন একত্রে সাবেক বাকি সদ সমেত আদায় করিতে প্রবত্ত হইলেন। এক দিবস প্রমদা বারাডায় দাঁড়াইয়া শ্যামাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও শ্যামা, বলি তোমাদের বাবাজী মহাশয় কোথায় গেলেন, কাপড় ধার করতে, না টাকা ধার করতে ? আজকাল যে বড় গানবাজনার কথা শুনতে পাই নে ?” শ্যামা কহিল, “যদি বেচে থাক, আর পরমেশ্বর তোমার চোক কান বজায় রাখেন, তা হ’লে শুনতে পাবে।" প্রমদা শ্যামার কথায় ক্ৰোধাবিত হইয়া কহিলেন, “কি বললি ?" শ্যামা কহিল, "আজ মাসের ক'দিন, তাই জিজ্ঞাসা কলেম ।” প্রমদা । দেখলে, দেখলে মাগীর আক্কেলটা ? থাকতো যদি বাড়ী, তা হ'লে এখনি মুখখান জতো দিয়ে সোজা ক’রে দিতাম । সরলা কহিলেন, “শ্যামা ক্ষান্ত দে, শ্যামা ক্ষাত দে । ও’র মনে যা আসে, উনি তাই বলন না, তোর ত গা ক্ষয়ে যাবে না।” শ্যামা কহিল, "কেন ক্ষান্ত দেব ! উনি কোথাকার কে !” উচ্চৈঃস্বরে প্রমদাকে সম্বোধন করিয়া “কথায় কথায় জয়তো মারবে বলো । এস, মার না ? আমারও হাতে আছে ।” প্রমদা রাগে আর অধিক কথা কহিতে পারলেন না । “থাক থাক, আসকে আগে বাড়ী, তখন তোব কত প্রতাপ দেখাবো ।" শ্যামা। কত লোকে দেখাইয়াছে, এখন বাকি আছ তমি। এস না, এখনি দেখাও না ? আর তার বাড়ী আসবার দরকার কি ? প্রমদা কথা না কহিয়া গহমধ্যে গিয়া বসিলেন। রাগে কর্ণের অগ্র পয্যন্ত রক্তিমাবণ হইয়াছে, ফেসি ফোঁস করিয়া ঘন ঘন নিশ্বাস বহিতেছে । হস্ত পদ