বনবাণী/নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা/আষাঢ়

উইকিসংকলন থেকে


আষাঢ়

কোন্ বারতার করিল প্রচার
দূর আকাশের ইঙ্গিতে
ঐরাবতের বৃংহিতে।
নিষ্ঠুর তপে আছে নিমগ্ন
ধরণী তপস্বিনী,
রুক্ষ অঙ্গ পাংশুধূসর,
ধ্যান-অঙ্গন শুষ্ক ঊষর,
নাহি সখী সঙ্গিনী।
বুঝি আসন্ন হল তার বর,
শুনি গর্জন রথঘর্ঘর,
বুঝি আসে কাঙ্ক্ষিত,
তাই চিত্ত যে হল চঞ্চল,
আঁখিপল্লব বাষ্পসজল,
তাই সে রােমাঞ্চিত।


ওগাে বিরহিণী, গেল দুর্দিন,
দুঃখ ঘুচিবে নিঃশেষে,
মনোমাঝে যারে রুদ্ধ নয়নে
পূজিলে ধ্যানের পুষ্পচয়নে,
দেখা দিবে আজি বিশ্বে সে।
ঐ বুঝি আসে আকাশে আকাশে
সমারােহ তার বিস্তারি।
বিজয়ী সে বীর, ওরে ভয়ভীতা
যাবে তাের ভয়, ওরে পিপাসিতা
তৃষা হতে দিবে নিস্তারি।

ললাটে নিপুণ পত্রলেখাটি
আঁকো কুঙ্কুমচন্দনে।
দুলাও চামেলি অলকে তোমার,
কবরী রচিয়া এলোকেশভার
বেঁধে তোলো বেণীবন্ধনে।


উঠ ধূলি হতে, ওগো দুঃখিনী,
ছাড়ো গৈরিক উত্তরী।
নীলবসনের অঞ্চলখানি
কম্পিত বুকে লহো লহো টানি,
হাসিমুখে চাহ সুন্দরী।
বীরমঙ্গল ঘোষুক মন্দ্র,
মুখে তুলে তোর শঙ্খ নে।
কৌতুকসুখ চক্ষে ফুটুক,
বিদ্যুৎ-শিখা কম্পি উঠুক
তব চঞ্চল কঙ্কণে।
কুঞ্জকানন জাগ্রত হোক
আজি বন্দনাসংগীতে-
শিহর লাগুক শাখায় শাখায়,
মাতন লাগুক শিখীর পাখায়
তব নৃত্যের ভঙ্গিতে।


শ্যামবন্ধুরে শ্যামল তৃণের
আসনে বসাবি অঙ্গনে।

রাখিবি দুয়ারে আল্‌পনা আঁকি,
চরণের তলে ধুলা দিবি ঢাকি
টগর করবী রঙ্গণে।
গাও জয় জয়, গাও জয়গান,
ঢেউ তোলো স্বরসপ্তকে-
বনপথে আসে মনোরঞ্জন,
নয়নে পরাবে প্রেম-অঞ্জন,
সুধা দিবে চিরতপ্তকে।