পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

 গীতাঞ্জলিকে সাক্ষ্য হিসাবে বিচার্য ক্ষেত্রে উপস্থিত করিবার পটভূমিকাটাকু যথাসাধ্য সংক্ষেপে প্রস্তুত করা হইল।


 রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মজ্ঞানের বা আত্মোপলব্ধির বিচারক্ষেত্রে একমাত্র উপনিষদেরই আশ্রয় বা সাহায্য আমরা গ্রহণ করিয়া আসিয়াছি। অর্থাৎ ‘ব্রহ্ম’- প্রসঙ্গে উপনিষদকেই একমাত্র প্রমাণ বলিয়া প্রধানত আমরা মান্য করিয়া আসিয়াছি। কিন্তু গীতাঞ্জলির ক্ষেত্রে উপনিষদ প্রকৃতই কোন কাজে আসিবে কিনা, এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ও সঙ্গত বলিয়াই অনেকের মনে হইবে। কারণ, গীতাঞ্জলিকে আমরা বলিয়াছি ভক্তের গান, যে-গানের শ্রোতা স্বয়ং ভগবান।

 কাজেই দেখা যাইতেছে যে, গীতাঞ্জলির প্রসঙ্গে আমরা ‘ভক্তি’-র সম্মুখীন হইয়াছি। আমাদের বিচার্য হইল রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মজ্ঞান, আর রবীন্দ্রনাথের ভগবানে ভক্তি তথা ব্রহ্ম-ভক্তিকেই গীতাঞ্জলির মাধ্যমে আলোচ্যক্ষেত্রে আমরা আনিয়া ফেলিয়াছি।

 ব্রহ্মজ্ঞানের সঙ্গে আমরা পরিচিত। কিন্তু ব্রহ্ম ভক্তির কোন প্রকাশ বা উল্লেখ উপনিষদে আছে কিনা, তাহাই এখন আমাদের অবশ্য বিচার্য এবং সেই বিষয়ে একটু অনুসন্ধান কর্তব্য। নতুবা গীতাঞ্জলিকে রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মজ্ঞানের প্রসঙ্গে বা বিচারে উপস্থিত করিবার কোন সযোগই আমাদের থাকে না। যথাসাধ্য সংক্ষেপেই আলোচনাটুকু শেষ করিবার চেষ্টা করা যাইতেছে।

 উপনিষদকে ভগবান বেদব্যাস বলিয়াছেন ‘ব্রহ্মজিজ্ঞাসা’। জিজ্ঞাসা বলিতে জানা বা জ্ঞানের কথাই বুঝাইয়া থাকে। তাই দার্শনিকগণ উপনিষদকে জ্ঞানশাস্ত্র বলেন। আর ভক্তি বলিতে ভগবানের সঙ্গে হৃদয়ের বিশেষ একটি সম্পর্ককে বুঝাইয়া থাকে। কিম্বা ভক্তি বলিতে মনের একটি বিশেষ অবস্থাকেই বুঝাইয়া থাকে। সাধারণত ভক্তিশাস্ত্র বলিতে উপনিষদকে বাঝায় না, বুঝায় মহাভারত, গীতা, ভাগবত, বিষ্ণুপুরাণ প্রভৃতিকে

 কাজেই ভক্তির প্রসঙ্গে উপনিষদকে প্রমাণরূপে গ্রহণের প্রচেষ্টা অসঙ্গত ও ব্যর্থ বলিয়াই অনেকে মনে করেন। ইহার উত্তরে আমাদের বক্তব্য এই যে, উপনিষদই ভক্তির মূল উৎস এবং ঔপনিষদিক প্রেমতত্ত্বই পূর্বোক্ত ভক্তিশাস্ত্রসমূহে বিশদ করা হইয়াছে মাত্র। এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে এখন কয়েকটি দৃষ্টান্ত বা প্রমাণ উপনিষদ হইতে উদ্ধৃত হইতেছে।

 বৃহদারণ্যক নামক প্রাচীনতম উপনিষদে বলা হইয়াছে—“তদেতৎ প্রেয়ঃ পত্রাৎ