পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম সংখ্যা । ] নোহরদপ্রধায়ু সঞ্চার করিয়া দিল। আকাশে সূৰ্য্যাস্তকিরণের স্বর্ণবীণ বেদনার মৃচ্ছ নায় অলোকশ্রুত সঙ্গীতে ঝঙ্কত হইয়া উঠিল । বিস্তীর্ণ-নির্জন বালুতটে ধিচিত্র বর্ণচ্ছটায় দিন ধীরে ধীরে অবসান হইয়া গেল । মহেন্দ্র চক্ষু অদ্ধেক মুদ্রিত করিয়া কাব্যলোক হইতে গো-খুর-ধূলিজালের মধ্যে বৃন্দাবনের ধেমুদের গোষ্ঠে প্রত্যাবর্তনের হাম্বারব শুনিতে পাইল । বর্ষার মেঘে আকাশ আচ্ছন্ন হইয়। আসিল । অপরিচিত স্থানের অন্ধকার কেবল কৃষ্ণবর্ণের আবরণমাত্র নহে, তাহ বিচিত্র রহস্যে পরিপূর্ণ । তাহার মধ্য দিয়৷ যেটুকু আভা-যেটুকু আকৃতি দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা অজ্ঞাত-অনুচ্চারিত ভাষায় কথা কহে । পরপারবত্তী বালুকার অস্ফুট পাণ্ডুরতা, নিস্তরঙ্গ জলের মসীকৃষ্ণ কালিমা, বাগানে ঘনপল্লব বিপুল নিম্ববৃক্ষের পুঞ্জীভূত স্তব্ধতা, তরুহীন স্নান-ধূসর তটের বঙ্কিমরেখা, সমস্ত সেই আষাঢ়সন্ধ্যার অন্ধকারে বিবিধ অনিদিষ্ট অপরিস্ফুট আকারে মিলিত হইয়। মহেক্সকে চারিদিকে বেষ্টন করিয়া ধরিল । পদাবলীর বর্ষাভিসার মহেন্দ্রের মনে পড়িল ৷ . অভিসারিক বাহির হইয়াছে । যমুনার ঐ তটপ্রান্তে সে একাকিনী আসিয়া দাড়াইয়াছে। পার হইবে কেমন করিয়া ? “ওগে পার কর গো পার কর”—মহেন্দ্রের বুকের মধ্যে এই ডাক আসিয়া পৌছিতেছে --*ওগো পার কর ।” নদীর পরপারে অন্ধকারে সেই অভিসারিণী বহুদূরে—তবু মহেশ্র তাছাকে স্পষ্ট দেখিতে পাইল। তাছার কাল মাই, তাহার চোখের খালি । పులి বয়স নাই, সে চিরন্তন গোপবালী—কিন্তু তবু মহেন্দ্র তাঁহাকে চিনিল—সে এই বিনোদিনী । সমস্ত বিরহ, সমস্ত বেদনা, সমস্ত যৌবনভার লইয়া তখনকার কাল হইতে সে অভিসারে যাত্রা করিয়া, কত গান, কত ছন্দের মধ্য দিয়া, এখনকার কালের তীরে আসিয়া উত্তীর্ণ হইয়াছে ;—আজিকার এই জনহীন যমুনাতটের উপরকার আকাশে তাহারই কণ্ঠস্বর শুনা যাইতেছে—“ওগে। পার কর গে।”—থেয়া নৌকার জন্য সে এই অন্ধকারে আর কতকাল এমন একলা দাড়াইয়া থাকিবে— ওগো পার কর । - মেঘের এক প্রাস্ত অপসারিত হইয়া কৃষ্ণপক্ষের তৃতীয়ার চাদ দেখা দিল । জ্যোৎস্নায় মায়ামস্ত্রে সেই নদী ও নদীতীর, সেই আকাশ ও আকাশের সীমান্ত পৃথিবীর অনেক বাহিরে চলিয়া গেল । মৰ্ত্ত্যের কোন বন্ধন রহিল না । কালের সমস্ত ধারাবাহিকতা ছিড়িয়া গেল—অতীতকালের সমস্ত ইতিহাস লুপ্ত, ভবিষ্যৎকালের সমস্ত ফলাফল অস্তfহত – শুধু এই রজতধারাগ্লাবিত বর্তমানটুকু যমুনা ও যমুনাতটের মধ্যে মহেন্দ্র ও বিনোদিনীকে লইয়া বিশ্ববিধানের বাহিরে চিরস্থায়ী । মহেন্দ্র মাতাল হইয়া উঠিল । বিনোদিনী যে তাছাকে প্রত্যাখ্যান করিবে, জ্যোৎস্নারাত্রির এই নির্জন স্বৰ্গখণ্ডকে লক্ষ্মীরূপে সম্পূর্ণ করিয়া তুলিবে না, ইছা সে কল্পনা করিতে পারিল ন} । তৎক্ষণাৎ উঠিয় সে বিনোদিনীকে খুজিতে বাড়ীর দিকে চলিয়া গেল । শয়নগৃহে আসিয়া দেখিল, ঘর যুলৈ গন্ধে পূর্ণ। উন্মুক্ত জান্‌লা-দরজা দিয়া