পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] সমাজ স্বাধীনপ্রসঙ্গে উৎসাহ না দিলে এই স্বাধীনচিত্তার স্ফুরণ কোনদিন হইবে না। দেশের চিন্তাশীল ধৰ্ম্মজিঞ্জামুগণ এ বিষয়ে পথ না দেখাইলে এ দিকুই খুলিবে না । এ পথে সঙ্কীর্ণত রাখিলে চলিবে না। হিন্দুশাস্ত্র, বৌদ্ধশাস্ত্র, ইহুদী ও খৃষ্টীয় শাস্ত্র, মুসলমানশাস্ত্র, সকলের জন্য স্থান রাখিতে হইবে। শুধু পাণ্ডিত্যের দিক দিয়া নয়, ধৰ্ম্মজিজ্ঞাসুর প্রবৃত্তিতে সকলের আলোচনা করিতে হইবে,— জ্ঞান ও ভাবকে মিশাইতে হইবে । ইহাতে কোনই ভাবনার কারণ নাই। গীতারও কথা, খালি গীতাই পড়িলে, পরিষ্কার হয় না, তাহার অর্থের সজীবতা থাকে না, তাহ পুরাতন হইয়া যায়। ইংরেজীতে দর্শনশাস্ত্রের চর্চা করিলে, সংস্কৃতদর্শন বুঝিবার সহায়তা করে বই বিঘ্ন উৎপাদন করে না। কথা” বাড়িয়া যায়, কিন্তু না বলিয়াও থাকিতে পারি না । কেবল যশস্বী হইবার জন্ত সুিনি ইংরেজী লেখেন, তাহার ইংরেজীবিদ্যার দ্যায় যশও বে অতলজলে ডুবিবে, তাহ আর আশ্চৰ্য্য কি ? তথাপি এই বর্তমান সময়েও কোন লজ্জা না রাখিয়া আমি বলি, ভারতবাসীর ইংরেজীভাষার শুধু বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি নয়, কিন্তু দর্শন ও ধৰ্ম্মশাস্ত্রেরও আলোচনা করিবার অনেক প্রয়োজন আছে। যাহা স্বদেশীভাষায় লেখা হয়, তাহারও অনুবাদ আবগুক। শুধু "আত্মসন্মান কর, আত্মসন্মান কর” বলিলেই আকাশ হইতে আত্মসন্মান আসিয়8ভারতবাসীর মনে অবতীর্ণ হইবে না। বিদেশর লাঞ্ছনায় আপনার ঘরের দরজা বন্ধ করিয়া বসিয়া থাকিলেও আত্মসম্মান আসিবে না। সন্মানের যোগ্য বিষয়ের প্রসঙ্গ কর, 8 বৰ্ত্তমানযুগের স্বাধীনচিন্তা। 2ఇరీ জগদ্বাসীকে তাহার অংশ দাও, তবে আত্মসম্মান আসিবে । জাপানীরা যদি ইংরেজী না লিখিত, আজ আমরা তাহদের সম্বন্ধে কি জানিতাম ? প্রত্যেক বিষয়ে কেবল হঠিয়া-গিয়া নিজেদের ভিতর নিজেদের সঙ্কুচিত করিলে, আপনাদের চিরজীবনের মত হীনতা আমরা আপনার মাথায় পাতির স্বীকার করিয়া লইলাম। বাস্তবিক দৈবপ্রসাদদত্ত কোন গৌরবের জিনিষ ঘদি এখনও আমাদের থাকে, তবে জগতের সম্মুখে তাহাকে প্রতিষ্ঠিত রাখিতে, তাহার উৎকর্ষ করিতে দেবতার নিকট আমরা দায়ী। তবেই বিদেশীদের সঙ্গে সমভূমিতে দাড়াইয়া, নিরস্ত্র হইয়াও আমরা আমাদের জাতীয়জীবনের গৌরব রক্ষা করিতে পারিব। নতুবা কেবল বিষাক্ত অপমানক্ষত বুকে বহিয়া, আত্মসঙ্কোচের ভিতর তাহার আরোগ্যের বৃথা আশা রাখিয়, জগতের বর্বর জাতিদিগের দশা অনুধ্যান করিতে করিতে অলক্ষিত প্রাকৃতিক নিয়মে আমাদিগুকে তাহদেরই সমভাবাপন্ন হইয়া যাইতে হইবে, এবং তাহাদিগেরই দশার, ভিতর ডুবিতে হইবে। সে দশ যদি আমাদের কোন-দিন হয়, তবে সে ইংরেজের অত্যাচার নয়, সে সাক্ষাৎ বিধাতার দণ্ড । বিধাতা যাহাকে তাহার অতুল আশীৰ্ব্বাদ দিয়া গড়িয়াছেন, ইংরেজের সাধ্য নাই যে, সে " বৰ্ব্বরজাতিদিগের সহিত মেরূপ ব্যবহার করিয়াছে, তাহারও সহিত সেই ব্যবহার করবে। জগতের মধ্যে চিহ্ণিত করিয়া কেবল ভারতবর্ষের মধ্যে বিধাতা সকল ধৰ্ম্মকে মিলিত করিয়াছেন, • তাহদের প্রসঙ্গে ভারতের মধ্যে যে ধর্ম